হাইব্রিড খ্যাত বিভিন্ন দল থেকে হঠাৎ আগমনকারীদের তালিকা হচ্ছে আওয়ামী লীগে। খোদ দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিনিয়র নেতারা দলের প্রতিটি স্তরে এই হাইব্রিড শনাক্তের কাজ শুরু করেছেন। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এই কাজে মাঠে নেমেছেন নেতারা। তারা গোপনে ‘হাইব্রিড’ নেতাদের শনাক্তে তথ্য সংগ্রহ করছেন। বিশেষ করে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার খ্যাত উত্তরায় এই কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে।

দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিভিন্ন দল থেকে হঠাৎ আগমনকারী লোকজনের সংখ্যা শহর এলাকায় সবচেয়ে বেশি। কাউন্সিল বা কমিটি পুনর্গঠন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত থেকে বড় একটি অংশ এবারও জায়গা নিতে পারে বলে তথ্য আছে। তাই এই বিষয়ে এবার সতর্ক ক্ষমতাসীন এই দলটি।

গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে, ঢাকার উত্তরাতেও এসব হাইব্রিড বা অন্য দল থেকে লোকজন বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগে ঢুুকে পড়েছেন। তবে এদের দলে জায়গা করে দিতে উত্তরা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাই দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে সিনিয়র নেতারা নিজের বলয় বাড়ানোসহ নানা সুবিধা নিয়ে এসব লোককে দলে স্থান দিলেও তাদের খুব একটা সক্রিয় দেখা যায় না রাজনীতিতে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব হাইব্রিড নেতারাই দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। যার বদনাম বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। নতুন ‘জয় বাংলা’ বলা এসব লোকজনের কর্মকান্ডে বিব্রত বোধ করেন দলের ত্যাগী নেতারা। তিনি আরো জানান, উত্তরার সাতটি থানা ও কয়েকটি ওয়ার্ড কমিটিতে সবার্ধিক সংখ্যক হাইব্রিডকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। যাদের অতীত রেকর্ড আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। অনেকে গ্রামে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গত কয়েক বছরে শহরে এসে বড় আওয়ামী লীগার সেজে বসেছেন। এসব নেতাদের ব্যাপারে এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদ এসেছে। হাইব্রিডদের সংখা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, উত্তরার বিভিন্ন কমিটিতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নেতা হাইব্রিড। অথচ অনেক ত্যাগী নেতারা কমিটিতে পদ পাননি। যাদের আমরা সব সময় মিছিলি মিটিংয়ে পেয়েছি। পদ না পেয়ে এসব লোকজন এখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন, যা দুঃখজনক।

এ বিষয়ে উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, উত্তরা আওয়ামী লীগে হাইব্রিড যে ঢুুকেনি তা অস্বীকার করব না। তবে এ ঘটনা আমার থানায় নেই বললেই চলে। তারপরও হয়তো দুই-একজন থাকতে পারেন। কারণ আমরা সবাই সবাইকে চিনি।

তবে ভিন্ন কথা বলেছেন উত্তরা পশ্চিম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ সিদ্দিকী কাক্কা। তিনি বলেন, হাইব্রিড অনুপবেশের বিষয়টি সত্য। আমার থানা এলাকায় দলীয় কর্মসূচিতে আমি ১০ থেকে ১৫ জনকে পাই। ৭১ সদস্যের বাকিদের কখনোই দেখা পাইনি। আমার থানায় কমিটির নামে জগাখিচুড়ি হয়েছে।

একই দাবি করেন পূর্ব থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি কুতুব উদ্দিনও। অপর এক স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এস এম মাহবুবও স্বীকার করছেন উত্তরায় অন্য দলের লোকজনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে সংখ্যায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হবে বলে তিনি মনে করেন না।

"