রাবি প্রতিনিধি

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

রাবির সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বমানের শিক্ষার বিকল্প নেই

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মূলত মুক্তচিন্তা বিকাশের জায়গা। জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার মধ্য দিয়ে এখানে নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্ম হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একটি ছাড়া অপরটি অচল। তাই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করতে হলে দেশে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। আর সেই নেতৃত্ব তৈরি হবে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোনো স্থান থাকবে না।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তচিন্তা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা, জাতিগঠনমূলক কর্মকান্ড, সমকালীন ভাবনা, সংস্কৃতি চর্চা, খেলাধুলা ইত্যাদি সৃজনশীল কর্মকান্ড শিক্ষার্থীদের কেবল দক্ষ ও পরিপূর্ণ করে না; কূপমন্ডূকতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকেও পরিপুষ্ট করে। এর প্রভাব ব্যক্তি জীবনে তো বটেই, সামষ্টিক জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

অনুষ্ঠানে উগ্রবাদ নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকাল বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসহিষ্ণুতা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের মতো নেতিবাচক জাতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছি। আমি মনে করি, এর উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে, মুক্তচিন্তা ও সংস্কৃতি চর্চার অভাবে।

প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সবার সঙ্গে এগিয়ে চলার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবতার প্রয়োজনে দেশে আজ পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। জনসংখ্যার অনুপাতে এ সংখ্যা হয়তো অধিক হবে না। কিন্তু উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মৌলবাদ ও উগ্রবাদকে উসকে দিয়ে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা চালায়। মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় আর সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। তাই শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রতিটি নাগরিক যাতে স্বাধীনতা বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারে সে ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানোর পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।

সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমাদের আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর পেছনে রয়েছে তোমাদের পিতা-মাতা, শিক্ষকমন্ডলীসহ সমাজ, দেশ ও জনগণের বিপুল অবদান। তোমরা তাদের কাছে ঋণী। তোমরা সমাজ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে তোমাদের মেধা-প্রজ্ঞা ও কর্ম দিয়ে জাতির আশা আকাক্সক্ষা পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

এর আগে রাবির দশম সমাবর্তন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য দেশরতœ শেখ হাসিনা হল ও ছাত্রদের জন্য শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল নামে দুইটি দশ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর এম আবদুস সোবহান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ। এরপর সমাবর্তন বক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমেরিটাস আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বক্তব্য দেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শেষে বিকেল ৫টায় রাবি স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে গান পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্য শিল্পীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close