খুলনা ব্যুরো
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের বাড়ি সংরক্ষণের উদ্যোগ
‘যে জন দিবসে, মনের হরষে/জ্বালায় মোমের বাতি/আশুগৃহে তার দেখিবে না আর/নিশীথে প্রদ্বীপ ভাতি।’ কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের এই কবিতাটির সঙ্গে পরিচয় নেই, এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। খুলনার দিঘলিয়ার সেনহাটি গ্রামে এই বরেণ্য কবির দীর্ঘদিন ধরে দখল হয়ে যাওয়া জন্মভিটা উদ্ধার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর।
সেনহাটি শিববাড়ী পূজা মন্দির পরিচালনাকারী সংগঠন হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পুত্র উমেশ চন্দ্র মজুমদার কবির স্মৃতি রক্ষার্থে শিববাড়ী মন্দিরের জন্য সেনহাটি মৌজার ৪টি দাগে ৭০ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে সেখানে কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য নামফলক উন্মোচন করা হয়। ওই জমিতে ১৩৪৯ সালে স্থানীয় নারী সরোজিনী দেবী তার স্বামী রায় কুমোদ বন্ধু দাশ শর্মা বাহাদুরের নামে মন্দির ভবন নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ৮০’র দশকে মন্দিরের সম্পত্তি প্রথম দফায় অবৈধ দখলে চলে যায়। এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তদন্ত করে মন্দিরের অনুকূলে রায় প্রদান করেন। এদিকে, ২০১৬ সালের দিকে আবারও একটি চক্র উপজেলা ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করে’ মন্দিরের ১১৭৯ দাগের ৪ শতক জমি নিজেদের নামে ডিসিআর মারফত বরাদ্দ নেয়। এর মধ্যে সেনহাটি গ্রামের মৃত আবদুস সালাম খানের ছেলে চঞ্চল খান তিন শতক এবং একই এলাকার আবদুল ওহাব এক শতক জমি বরাদ্দ নেন। এরপর ভৈবর নদ সংলগ্ন মন্দিরের ভাষাণ ঘাটে চঞ্চল খান পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিষ্ণপদ পালকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র দত্তের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসন তদন্তের নামে সময় ক্ষেপণ করছে। এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের জমিসহ সকল স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে। সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মাণ করা হবে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা এ প্রতিবেদককে জানান, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কবির জন্মস্থানটি সংরক্ষণের জন্য একটি প্রস্তাব প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী, পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
"