নিজস্ব প্রতিবেদক
কোটা সংস্কার
আন্দোলনের হুশিয়ারি ঈদের পর
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। চারদিনের লাগাতার কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ মে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার ৬২ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তারা কোনো লিখিত নির্দেশনা পাননি। এমনকি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের যে কথা ছিল তা-ও হয়নি। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। ঈদের ছুটির আগে কর্মদিবস বাকি একটি। আগামীকাল প্রজ্ঞাপন আসার কোনো আভাস মিলেনি। এদিকে, প্রজ্ঞাপনের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ফুঁসছেন। তারা ঈদের আগে প্রজ্ঞাপন না হলে ঈদের পর কঠোর আন্দোনলে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে তিন-তিনবার আন্দোলন স্থগিত করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ঈদের পর সারা দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করবে।
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও প্রতিবন্ধীদের মতো অবহেলিত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে এই বিষয়টি ঠিক করার কথা। কোটা বিলুপ্ত হবে নাকি সংস্কার হবে সেটি এখনো সুস্পষ্ট হয়নি।
এ বিষয় জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা তিন তিনবার আন্দোলন স্থগিত করেছি। আমরা তার ওপরে ভরসা করে আন্দোলন স্থগিত করি, কিন্তু দুই মাস পার হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তারা একদিকে আমাদেরকে সান্ত¦না দেওয়ার জন্য প্রজ্ঞাপনের কথা বলছেন, অন্যদিকে প্রশাসন ব্যবহার করে আন্দোনল দমনোর চেষ্টা করছেন। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে আশ্বাস দিলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় নাখোশ আন্দোলনকারীরা। তাই যৌক্তিক দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নেমে আসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।
কোটার সংস্কার নিয়ে সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি। আর সরকারের পক্ষ থেকে একই গান বাজানো (প্রজ্ঞাপন হবে) হচ্ছে। ফলে আমরা আর আস্থা রাখতে পারছি না। আমিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সবাই এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন পার করছি। আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে ঈদের পর আবারও কঠোর আন্দোনে যাব। এ বিষয় আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি সবাই ঈদের পর মিলে সিদ্ধান্ত নেব এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি জানাব।
এ বিষয় জানতে চাইলে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে তিন তিনবার ডেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা তাদের দেওয়া কথা রাখেনি। যে কারণে, আমরা আর কোনো আশ্বাসে বিশ্বাসী নয়। ঈদের পরে আমরা প্রজ্ঞাপন নিয়েই মাঠ ছাড়ব। প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে, তবু প্রজ্ঞাপন ছাড়া বাংলার ছাত্রসমাজ রাজপথ ছাড়বে না।
এ বিষয় জানতে চাইলে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ঈদের পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে হয়তো মানববন্ধন বা বিক্ষোভ পালন করা হবে। এরপরও যদি প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়। সারা দেশের ছাত্রসমাজ নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তারা প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারছেন না। কোটা সংস্কারের বিষয়ে কমিটি করার একটি প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে নির্দেশনা পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
"