প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ মে, ২০১৮

গণতান্ত্রিক দেশও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে

বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক আক্রমণ বাড়ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেস ফ্রিডম ডে উপলক্ষে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। বলা হয়, ক্ষমতাপক্ষকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে গিয়ে কেবল যে যুদ্ধাঞ্চল ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনের দেশে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হতে হচ্ছে তা নয়; গণতান্ত্রিক দেশেও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মুক্ত গণমাধ্যমের দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার জন্যও প্রতিবেদনে আহ্বান জানানো হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের অধিকার হরণের সাম্প্রতিক কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয়, একটি হত্যাকান্ড নিয়ে তদন্ত করায় মিয়ানমারে দুই রিপোর্টারকে আটক করা হয়েছে। হাঙ্গেরির দুটি স্বাধীন ধারার দৈনিক সংবাদপত্রের একটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং আফগানিস্তানে বোমা হামলার সংবাদ সংগ্রহের সময় ৯ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এর মধ্য দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করাটা সরকারের জন্য সহজ হয়। সরকার তখন দেশে শতভাগ শিক্ষার হার আছে বলে দাবি করতে পারে, বিদেশের অট্টালিকায় দেশের সম্পদ উড়ানো যায়, জোর করে বিরোধীদের গুম করে দেওয়া যায় এবং সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার কিংবা স্বাস্থ্যগত বাজে পরিস্থিতির পরিসংখ্যান লুকিয়ে ফেলা যায়।

এইচআরডব্লিউ মনে করে, মিডিয়াকে দমন করার অনেক পথ আছে। আর এগুলোর সবই সেল্ফ সেন্সরশিপকে (স্ব আরোপিত-সেন্সরশিপ) উৎসাহিত করে। জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার কথা বলে বেশ কয়েকটি দেশ সাংবাদিকদের কারান্তরীণ করে থাকে। এদিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে তুরস্ক। অনেক দেশ আবার সরকারবিরোধী সমালোচনা ঠেকাতে আইন প্রণয়ন করে এবং অবমাননার অভিযোগ তুলে সাংবাদিক ও ব্লগারদের কারাগারে পাঠায়। এমনই একটি আইনের আওতায় মিয়ানমারের এক কবিকে কারাভোগ করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক দেশে আবার নেতৃত্বকে অপমান করাটা বেআইনি বিবেচনা করা হয়। হতে পারে ওই নেতা প্রেসিডেন্ট, রাজা, জাতির জনক কিংবা সেনাবাহিনী। সিঙ্গাপুরে বিচার বিভাগকে অবমাননা করা নিষিদ্ধ এবং বিদেশি কোনো রাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করে তোলার জন্য সাজা দেয় বাহরাইন। এছাড়া সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ এবং লাইসেন্স অনুমোদন সীমিত করার হুমকি-ধমকি তো আছেই। আইনি কৌশল প্রয়োগ করে কাজ না হলে সরকার হুমকি-ধমকি দেয়, সহিংসতা তৈরি হয়, কারাবন্দি করা হয় কিংবা হত্যা করা হয়। আমরা জানতাম একনায়কতান্ত্রিক সরকার গণমাধ্যমকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে। কিন্তু এখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতারাও একই কাজ করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে রিপোর্ট তার পছন্দ হয় না, সেটাকেই ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেন। সিরিয়া, ভেনেজুয়ালা, লিবিয়া ও সোমালিয়ার মতো দেশগুলোতে সরকারকে একই ধরনের আচরণ করতে দেখা যায়।

এইচআরডব্লিউ মনে করে, কেবল গণতন্ত্রের উপস্থিতি বোঝাতেই স্বাধীন সংবাদমাধ্যম জরুরি, তা নয়। বাচ্চার জন্য ট্যাপের পানি খাওয়া নিরাপদ কি না, বয়স্করা যথাযথ চিকিৎসা সুরক্ষা পাচ্ছেন কি না, কোনো নারী কর্মক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কি না কিংবা যে ভূমিতে মানুষ থাকছে তা শিল্প কারখানার কারণে বিষাক্ত হয়ে পড়ছে কি না; সবগুলো বিষয় জানার জন্যও মুক্ত গণমাধ্যম প্রয়োজন। আর সে কারণে এখনই মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য সোচ্চার হতে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist