শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

অনেক অর্জনের এক টেস্ট

চট্টগ্রাম টেস্ট শেষ। পাঁচ দিনের টেস্ট বাংলাদেশ জিতেছে তিন দিনে। সেশনের হিসেবে আট সেশন লেগেছে টাইগারদের জিততে। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুততম জয়। ঘরের মাঠে এটাই ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম জয় সাকিব-মুশফিকদের। এ টেস্ট দিয়েই আবিষ্কার হয়েছে নাঈম হাসান নামক প্রতিভা। চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেই অনন্য এক অর্জনের মালিক হয়েছেন সাকিব আল হাসান। রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলেছেন মুমিনুল হক সৌরভও। এসব খণ্ড খণ্ড অর্জনের সমন্বিত ফল হিসেবে চট্টগ্রাম টেস্টে ৬৪ রানে জিতেছে বাংলাদেশ। রোমাঞ্চকর জয়ের ম্যাচটা অনেক কারণেই মনে থাকবে টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের।

অভিষিক্ত নাঈম হাসানের বিশ্বরেকর্ড : অভিষেক টেস্টেই চমক দেখিয়েছেন চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে তিনিই একমাত্র বোলার যিনি ১৮ পেরোনোর আগে অভিষেক টেস্টেই পাঁচ উইকেট নিলেন। প্রথম ইনিংসে তার ঘূর্ণিতে গুঁড়িয়ে যায় ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং। ১৭ বছর ৩৫৫ দিনে অভিষিক্ত নাঈম ভেঙে দেন ২০১১ সালে গড়া অস্ট্রেলিয়ান পেসার প্যাট কামিন্সের রেকর্ড। কামিন্স ২০১১ সালে নভেম্বর মাসেই জোহেন্সবার্গ টেস্টে নিজের অভিষেকে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন। তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর ১৯৩ দিন। নাঈমের পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিতে ছিটকে গেছেন এনামুল হক জুনিয়র। বাংলাদেশের হয়ে ১৮ বছর ৩২ দিনে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন এনামুল হক জুনিয়র। নাঈম ভেঙে দিলেন তার রেকর্ডটি। নাঈমের ভবিষ্যৎ খুবই ভালো বলছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, নাঈম অনেক সাহসী।

তামিমের পাশে মুমিনুল : চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সব সময়ই ‘পয়মন্ত’ মুমিনুলের কাছে। এই মাঠে নামলেই দারুণ স্বাচ্ছন্দ্য থাকেন মুমিনুল হক। ওয়েস্ট ইনিডজের বিপক্ষেও ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম ইনিংসে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। ১৬৭ বলে ১০টি চার ও একটি ছক্কায় ফিরেন ১২০ রান করেন মুমিনুল। এর মধ্য দিয়ে টেস্টে রেকর্ডবুকে অনেক পরিবর্তন এনেছেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির সংখ্যায় তামিম ইকবালকেও ছুঁয়ে ফেলেছেন মুমিনুল হক। তামিমের আট সেঞ্চুরি ৫৬ টেস্টে, মুমিনুল স্পর্শ করলেন ৩২ টেস্টেই। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন যৌথভাবে এই দুজনের।

পাশাপাশি তিন অঙ্ক ছুঁয়ে মুমিনুল হক বিশ্ব ক্রিকেটেও কীর্তি গড়েছেন। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকার শীর্ষে বসলেন বিরাট কোহলির পাশে। ২০১৮ সালে এ পর্যন্ত চারটি সেঞ্চুরি করতে ১৮টি ইনিংস খেলেছেন কোহলি। অন্যদিকে পাঁচ ইনিংস কম খেলেই চার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুমিনুল। মুমিনুল কোহলিকে পেছনে ফেলেছেন ব্যক্তিগত স্কোরেও। এ বছর কোহলির সর্বোচ্চ স্কোর ১৫৩। আর মুমিনুলের ১৮৮।

সাকিবের কীর্তি : আঙুলের চোট কাটিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে ফিরে বিশ্বরেকর্ড করলেন সাকিব আল হাসান। পেছনে ফেলেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামকে। তার চেয়ে এক টেস্ট কম খেলেই ২০০ উইকেট পূর্ণ করেছেন সাকিব। ৫৪ টেস্টে সাকিব করেছেন তিন হাজার ৭২৭ রান ও উইকেট নিয়েছেন ২০১টি। টেস্টে শতক রয়েছে তার মোট পাঁচটি আর ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১৮ বার।

রফিককে ছাড়িয়ে তাইজুল : চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। তার আগে প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে টেস্টে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি এত দিন রফিকের দখলে ছিল। সেটি ওই ২০০৩ সালেই, ছয় ম্যাচে ৩৩ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সাত উইকেট নিয়ে এ বছর মাত্র ছয় টেস্টে তাইজুলের উইকেটসংখ্যা হয়ে গেল ৪০। তাতেই বছরের সেরা চার টেস্ট বোলারের একজন হয়ে গেলেন। এবার তার সামনে সব দলের বোলার মিলিয়েই এ বছরের সেরা হওয়ার হাতছানি। তাইজুলের সামনে কেবল তিনজন- কাগিসো রাবাদা (৪৬ উইকেট), জেমস অ্যান্ডারসন (৪৩) ও দিলরুয়ান পেরেরা (৪১)।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম টেস্ট,বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ,নাঈম হাসান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close