গাজী শাহনেওয়াজ
নেটওয়ার্ক স্থাপনে অবৈধ কার্যক্রম বাংলাফোনের
সমন্বয় সভার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের
অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা প্রতিষ্ঠান বাংলাফোন। প্রতিষ্ঠানটি তোয়াক্কা করছে না নিয়মনীতির। ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্স ও গাইডলাইনের শর্তপূরণে। চুক্তির অঙ্গীকার লঙ্ঘন করে শোকজ খেয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। এত কিছুর পরও প্রতিষ্ঠানটির বোধদয় না হওয়ায় বাংলাফোন ও বিটিআরসির সমন্বয়ে সভা আয়োজনের প্রস্তাব রেখেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
জানতে চাইলে বাংলাফোনে ব্যবস্থাপক (এমডি) মো. আমজাদ হোসেন খান বলেন, ইন্টারনেট প্রোভাইডার সার্ভিসের (আইএসপি) লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ। এ বিভাগে নতুন মন্ত্রী এসে লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগের প্রক্রিয়াগুলো খতিয়ে দেখছেন। প্রক্রিয়া শুরু হলে অন্যদের মতো আমরাও নবায়নের চেষ্টা চালাব।
বিটিআরসির প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাফোন লিমিটেড আইআইজি লাইসেন্স পাওয়ার পর তাদের নেটওর্য়াক রোলআউট টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়। আইআইজি নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্সের শর্তের ১১ স্থানের মধ্যে ঢাকাসহ আঞ্চলিক পর্যায়ের ৩টি স্থানে প্রাথমিক পর্যায়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট (পিওপি) নেটওর্য়াক স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কমিশনের কোনো অনুমোদন না নিয়েই দেশের ৩৭ প্রধান জেলা শহরে এবং ২৪৪ উপজেলায় পিওপি সংযোগ স্থাপন করে যা আইআইজি লাইসেন্সের পরিপন্থী।
অবৈধ সংযোগের কারণে বিটিআরসি থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে যে জবাব দেওয়া হয় তা কমিশনের কাছে সন্তোষজনক ছিল না। তাদের দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি একটি টিম বাংলাফোনের অফিস পরিদর্শন করেন। ওই টিমের দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি শুধু আন্তর্জাতিক আইএসডি এবং মোবাইল অপারেটরদের সংযোগ পয়েন্ট টু পয়েন্ট ডাটা সংযোগ পর্যায়ে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু ওই সংযোগ লিংক দিয়ে বাংলাফোন ট্রান্সমিশন কানেক্টিভিটি প্রদান করেছে। সেবা গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশব্যাপী বাংলাফোনের সংযোগ স্থাপনকারী (রুট) পথ দিয়ে অভ্যন্তরীণ জেলা পর্যায়ে কানেক্টিভিটি পরিচালনা করছে যা লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী আইএসপি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের আওতা বহির্ভূত।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়াই ২০০৫ ও ২০০৭ সালে শেয়ার মূলধন পরিবর্তন করে। এর জন্য তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। বাংলাফোন কর্তৃপক্ষের জবাবে পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি ৩টি সিদ্ধান্ত নেয়; যার মধ্যে অবকাঠামো শেয়ার নীতিমালা এবং ন্যাশনাল টেলিফোন ট্রান্সমিশন নেটওর্য়াক (এনটিটিএন) লাইসেন্সিং নীতিমালার শর্তানুযায়ী শুধুমাত্র এনটিটিএন লাইসেন্সধারী অপারেটর ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা অপারেটরের কাছে তাদের এনটিটিএন লিজ প্রদান না করা, আইএসপি লাইসেন্সবহির্ভূত কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ লাখ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা এবং আঞ্চলিক আইএসপি, জোনাল পিএসটিএন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পারমিট সংশ্লিষ্ট কমিশনের সমুদয় বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাফোন বকেয়া ১ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার ৫৫৫ টাকা পরিশোধ করলেও কোনো অঙ্গীকারনামা প্রদান করেনি। উল্টো কমিশন ও সরকারের বিরুদ্ধে ১১টি রিট মামলা দায়ের করে; যার মধ্যে কয়েকটির রায় কমিশনের পক্ষে এসেছে। এখনো ৬টি মামলা চলমান রয়েছে।
এত নিয়ম লঙ্ঘনের পরও অবৈধ কার্যক্রম চালানো বাংলাফোনের শোকজের জবাব নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে মতামত পেতে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে বিটিআরসি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির জাতীয় পর্যায়ে আইএসপির লাইসেন্স নবায়ন করা হবে কিনা সে বিষয়ে মতামত চাওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের। পরে আগে-পরে সব তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ তাদের মতামত দিয়েছে। এতে বাংলাফোন ও বিটিআরসির সমন্বয়ে সভা আয়োজনের নিদের্শনা রয়েছে।
পিডিএসও/তাজ