সম্পাদকীয়

  ১৯ জুন, ২০২০

সংকট সামলাতে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে

করোনা শুধু জীবনই কেড়ে নিচ্ছে না; সাধারণ জীবনযাপনকেও করে তুলেছে দুর্বিষহ। মানুষের আয় কমেছে; কর্মক্ষেত্র হারিয়ে হচ্ছেন বেকার। যারা কর্মক্ষেত্রে আছেন, তারাও খুব একটা ভালো নেই। দেশে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার পর সরকার ঘোষিত সারা দেশে ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন কার্যকরভাবে পালন করা হয়। তখন দোকানপাটসহ সব প্রতিষ্ঠান এককথায় বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা হুমকির মুখে পড়ে। অনেকের বেতন নেমে আসে অর্ধেকে। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে বোনাসও দেওয়া হয়নি। করোনাবহির্ভূত সময়ে কর্মরতদের বেশির ভাগই যে বেতন পেতেন তাতে তাদের সংসার কোনোভাবে চলে যেত। কিন্তু করোনাকালীন এখন আর যেন চলছে না সংসারের চাকা। বাসাভাড়া, সংসার খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ও অন্যান্য খরচের কথা ভাবতে গিয়ে তারা দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। টাকার সংকুলান করতে না পারায় অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। বাধ্য হয়ে উঠছেন ব্যাচেলর বাসায়। খালি হচ্ছে ফ্ল্যাটবাড়ি। অলিগলিতে বাড়ির সামনে ঝুলছে অনেক বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন। সংকট সামলাতে, বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। খুঁজতে হচ্ছে নতুন পথ।

বৈশ্বিক অর্থনীতি এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমাদের জন্য কোনো সুখবর নেই। চারপাশে কেবল নেতিবাচক খবর। আর এই নেতিবাচক পরিবেশের মাঝেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। দেশ-জাতি এবং নিজেকে রক্ষা করতে হবে। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সময়োপযোগী একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। তার এই বাক্যটিই আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড সোজা রেখে দাঁড়াতে বিশেষভাবে সহায়তা দেবে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। করোনাপরবর্তী সময়ে মানুষের কাছে খাদ্যের জোগানকে ইতিবাচক করতে পারলে অর্থনৈতিক টানাপড়েন মোকাবিলা অনেকটা সহজতর হয়ে উঠবে বলেই আমাদের ধারনা। পেটে খাবার থাকলে অন্যান্য সমস্যা যতই কঠিন হোক তা মোকাবিলা করে সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার পথ নিজেরাই খুঁজে নিতে সক্ষম হবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, করোনার কারনে সাম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হলে খাদ্য উৎপাদন আরো অনেক বাড়াতে হবে। সে লক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে। আমন ও রবি ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলতে চাই, এ চিন্তার সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করাও হবে একটি জরুরি পদক্ষেপ। আর সেজন্য প্রচারের মধ্য দিয়ে এর প্রসার ঘটাতে হবে এবং তা কালক্ষেপণ না করেই। সাধারণ মানুষসহ দেশের সব নাগরিককে মিতব্যয়ী হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে সরকারি পর্যায়ে অপচয় রোধে কঠোর নজরদারি আজ সবার কাম্য। দেশ ও জাতির কল্যাণে সব পর্যায়ে দুর্নীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার শপথ এই কঠিন যুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। অন্তত আগামী এক বছর আমরা যদি আত্মশুদ্ধির পথ অনুসরণ করি, তাহলে সংকট মোকাবিলায় জাতি হিসেবে আমরা যে সফল হব—তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংকট,বিকল্প পথ,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close