সম্পাদকীয়

  ১৬ মার্চ, ২০২০

কোয়ারেন্টাইনে অনীহা থেকে বেরিয়ে আসুন

করোনা এখন একটি আতঙ্কের নাম। বিশ্ব বাস্তবতাই এ আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বিশ্বব্যপী আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চিকিৎসাসেবার সব স্তর থেকে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

ভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে ইতালির ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের যেকোনো স্থানে করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে বাংলাদেশকেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই চলতে হচ্ছে।

এ দেশেও করোনা সন্দেহে গত শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় বিদেশফেরত প্রায় দেড় হাজারজনকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টানা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকলে রোগটি শনাক্ত করা যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্তের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে এটি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনে না রাখলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি শতভাগ। এদিকে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ইতালি থেকে ফেরা ১৪২ বাংলাদেশি। এ সময় বাইরে থেকে তাদের স্বজনরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। এ পরিস্থিতিতে সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

কোরায়েন্টাইনের অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা। তবে কোয়ারেন্টাইনে থাকার অর্থ এই নয়, আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেওয়া হলো। যদি কোনো ব্যক্তির করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে রাখতে এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অন্তত ১৪ দিন আলাদা থাকতে বলা হয়। কেননা, এই ভাইরাস ধীরে ধীরে দেহের সুস্থ কোষের সঙ্গে মিশে যায়। আর এ সময়ের মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিয়মিত সময়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা ও জ্বর কমাতে ওষুধ গ্রহণসহ ভালো স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করানো হয়।

এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, ইতালি থেকে ফেরা ১৪২ জন যে আচরণ করেছেন, তাকে কখনোই ইতিবাচক বলা যাবে না। তাদের ভাবা উচিত ছিল, দেশের ১৭ কোটি মানুষ এই ভাইরাস নিয়ে এক মহা-আতঙ্কের মধ্যে সময় অতিক্রম করছে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সিদ্ধান্তও সবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই। সুতরাং এ সিদ্ধান্তের প্রতি সবারই সম্মান দেখানো উচিত। যারা আসছেন—চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে তাদের অভিযোগ থাকতে পারে। তবে এভাবে বিদ্রোহ করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তারা এবং তাদের স্বজনরা যে আচরণ করেছেন, তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়।

আমরা মনে করি, নিজেদের নিরাপত্তা, দেশ ও জাতির নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি। শুধু সরকারের ওপর পুরো দায়িত্ব অর্পণ করলে ভুল করা হবে। আর এটি ভুলের জন্য পুরো জাতিকেই এর মাশুল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই সতর্কতাই আমাদের রক্ষা করতে পারে।

পিডিএসও/হেলাল​

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোয়ারেন্টাইন,সম্পাদকীয়,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close