সম্পাদকীয়

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

পুষ্টি ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও আমরা কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছি। কথাটি মিথ্যা নয়। খাদ্য উৎপাদনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভূতপূর্ণ সাফল্য এখন অনেকের কাছে বিস্ময় এবং ঈর্ষণীয়ও বটে। তবে ঘাটতি রয়েছে বণ্টনব্যবস্থা এবং কতিপয় অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেট নামধারী ব্যবসায়ী ও সহযোগীদের অদৃশ্য কারসাজির অন্তরালে। আর সে কারণেই পুষ্টিকর খাদ্যের ধারেকাছে ভিড়তে পারছেন না দেশের ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ।

পাশাপাশি সুষম খাবার কেনার সামর্থ্য নেই দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের। তাদের ভাত, রুটি ও কম পুষ্টির খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হচ্ছে। বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি পূরণ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

প্রতিবেদনের শুরুতে পুষ্টির সমস্যা কমিয়ে আনার প্রশ্নে বাংলাদেশের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, অপুষ্টির কারণে শিশুদের যে খর্বাকৃতির সমস্যা ছিল, তা গত ২১ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৯৯৭ সালে যেখানে দেশে ৬০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির ছিল, ২০১৮ সালে তা কমে এসে ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে খর্বাকৃতির শিশুর সংখ্যা এখনো বিপৎসীমার সমান্তরালেই থেকে গেছে।

প্রতিবেদন বলছে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সংখ্যাটি এখনো অনেক বেশি। একটি দেশের সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দিক থেকে এই সমস্যা একটি বড় বাধা। আরো একটি বড় বাধা নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতি। প্রতিবেদন বলছে, পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। তথ্যমতে, ১০ থেকে ৪৯ বছর বয়সি প্রতি তিনজনের একজন নারী প্রয়োজনীয় পুষ্টি-সমৃদ্ধ খাবার পাচ্ছেন না।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ অতিদরিদ্র। এদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। সুষম পুষ্টিকর খাদ্য তালিকায় বয়েছে ভাত, রুটি, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও তেল। এগুলো কিনে খেতে হলে একটি পরিবারকে খরচ করতে হয় ১৭৪ টাকা; যা ওই ১১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের নেই। তারা প্রতিদিন খাদ্যশক্তি পায় ভাত, আলু, রুটি ও সবজি থেকে। খাদ্য চাহিদা মেটানোর পেছনে এরা ৮০ টাকার বেশি খরচ করার ক্ষমতা রাখে না।

অন্যদিকে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা অজ্ঞতার কারণে বেশি টাকা খরচ করে অপুষ্টিজনিত মুখরোচক খাবারের দিকে হাত বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ কেবল অর্থনৈতিক নয়। দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য-সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবও দায়ী। সে কারণেই এখানকার মানুষ বেশি দাম দিয়ে কম পুষ্টিকর খাবার কিনে খায়।

আমরা মনে করি, সিস্টেম লস ঠেকাতে পারলে এবং চাহিদা মোতাবেক বাজারে খাদ্যপণ্যের জোগান ঠিক রাখতে পারলে মানুষ তার পছন্দমতো সুষম খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে। কেননা, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়েছে। তবে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্যের ব্যবধানও বেড়েছে। এই ব্যবধানকে কমিয়ে এনে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে আনা গেলে মোট জনগোষ্ঠী এক শক্ত-সামর্থ্য স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে সক্ষম হবে। আমরা সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সুষম খাবার,পুষ্টি ঘাটতি,পুষ্টিকর খাদ্যে,পুষ্টিকর খাদ্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close