সম্পাদকীয়

  ২৫ নভেম্বর, ২০১৯

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

গণপরিবহনে নারী যাত্রীদের নিগ্রহের ঘটনা দিন দিনই বাড়ছে। তা থেকে নারীকে রক্ষা কিংবা প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। কারণ দেশের ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ নারী প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে ছুটে যান। তাদের অধিকাংশেরই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে গণপরিবহন। আর পাবলিক প্লেসসহ যাতায়াতে এই ২৭ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে যৌন হয়রানির পরিমাণটাই সব চেয়ে বেশি। এই জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই এর লাগাম টেনে না ধরা গেলে পরবর্তী সময়ে তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

গণপরিবহনে নারীর সুরক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে। শ্রীলংকায় ৯০ এবং পাকিস্তানে ৮৫ শতাংশ নারী গণপরিবহনে নিপীড়নের শিকার হন। বাংলাদেশে এই চিত্র কতটা ভয়াবহ এই অবস্থান দেখে তা স্পষ্ট। গত শনিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে (পিআইবি) ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে বক্তারা বলেন, গণপরিবহনে মেয়েদের চলাচল নিরাপদ করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। গণপরিবহনে নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছেন না নারীরা। বিশেষ করে অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে।

শুধু গণপরিবহন নয়, নারীর চলাচলের সবদিকই আমাদের ভাবতে হবে। আমরা গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তার কথা বলছি, একই সঙ্গে রাস্তায় তাদের সম্মান দেওয়ার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। কিন্তু আমরা কি তা করছি? কোনো ঘটনার পর শুধু কয়েকটি সংগঠন বা কয়েকজন নারীই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তবে এদের সঙ্গে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থা বা ধর্মীয় সংগঠনেরও এগিয়ে আসা উচিত বলে আমরা মনে করি।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নতুন নিয়ম-কানুন হচ্ছে। এখন থেকেই এগুলোর সঙ্গে নারীদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে সঠিক উন্নয়নটা হবে না। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনো মানসিক উন্নয়ন হয়নি। তাই এই সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত উদ্যোগ ও যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া গণপরিবহনে উঠানামার ব্যাপারে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। এতে সমস্যা আরো কমে আসবে। দুই দরজার বাসের পেছনের দরজাটি শুধুমাত্র যাত্রী ওঠার জন্য এবং সামনেরটি নামার জন্য। অথচ যাত্রীরা দুটি দরজাই উঠানামার কাজে ব্যবহার করেন। এখানে যাত্রীদের সচেতন হওয়া এবং মানসিকতা পরিবর্তন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

গণপরিবহনে নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন ও যৌন হয়রানির ঘটনার জন্য অনেকে বিচারহীনতাকে দায়ী করে থাকেন। আমরা ঢালাওভাবে সে কথা বলছি না। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে চাই, বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন সাপেক্ষে নারীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে গণপরিবহন ব্যবহার নিশ্চিত করা। সে প্রাসঙ্গিকতায় গণপরিবহনে নারী হয়রানি বন্ধের বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গণপরিবহন,নারী,নিরাপত্তা,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close