সাজ্জাদ হোসেন, লেখক

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

সহিংস ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হোক

ছাত্র রাজনীতি করে নেতৃত্বের ধারা এবং পথকে বিকশিত করবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু নেতা-কর্মীরা যখন ছাত্রত্ব ব্যতিরেকে রাজনীতির পিছুপিছু ছুটে শুধুমাত্র একটি পদ বা ক্ষমতা পাবার আকাঙ্ক্ষায়, তখন আর ছাত্র রাজনীতি কথাটির মূলমন্ত্র সুরক্ষিত থাকে না।

টিভি সংবাদ কিংবা দৈনিক পত্রিকার একটি ‘সস্তা রিপোর্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে দু গ্রুপের সংঘর্ষ। রাজনৈতিক পরিবেশ হয়ে উঠে সে সময় সহিংসতায় ঘেরা। কখনো কখনো নিতান্ত তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ধাওয়া থেকে শুরু করে সংঘাতে জড়ানোর ঘটনা প্রায় নিত্য নৈমিত্তিক। এর ফলে অকালে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। আর আহতদের সংখ্যা তো আছেই। অথচ এ দেশের স্বাধীনতার অগ্রদূত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করা ছিল সুবিবেচিত এবং সমাজ সেবামূলক। স্কুলের ছাত্রত্বকালীন সময়ে তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ছিলেন।

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার আব্বা গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। এই সময়ে আব্বা কাজী আবদুল হামিদ এমএসসি মাস্টার সাহেবকে রাখলেন আমাকে বাসায় পড়ানোর জন্য। তার জন্য একটা আলাদা ঘরও করে দিলেন। গোপালগঞ্জের বাড়িটা আমার আব্বাই করেছিলেন। মাস্টার সাহেব গোপালগঞ্জে একটা মুসলিম সেবা সমিতি গঠন করেন। যার দ্বারা গরিব ছেলেদের সাহায্য করতেন।’

‘মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠাতেন সকল মুসলামন বাড়ি থেকে। প্রত্যেক রোববার আমরা থলে নিয়ে বাড়ি-বাড়ি থেকে চাল উঠিয়ে আনতাম এবং এই চাল বিক্রি করে গরিব ছেলেদের বই, পরীক্ষা ও অন্যান্য খরচ দিতাম। ঘুরে-ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতাম।’

‘আমাকেই অনেক কাজ করতে হত মাস্টার সাহেবের সাথে। হঠাৎ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তখন আমি এই সেবা সমিতির ভার নেই এবং অনেকদিন পরিচালনা করি। আর একজন মুসলমান মাস্টার সাহেবের কাছেই টাকা-পয়সা জমা রাখা হত। তিনি সভাপতি ছিলেন আর আমি ছিলাম সম্পাদক। ’

বঙ্গবন্ধুর পুরো জীবনাদর্শে কতোটুকু আজকের রাজনৈতিক ছাত্র সমাজ গ্রহণ করতে পেরেছে তা সত্যিই প্রশ্নের বিষয়! এখনকার বহুল সাধারণ ছাত্রগোষ্ঠী দাঙ্গা রাজনীতি চায়না। তারা চায় সুষ্ঠু আদর্শে রচিত নেতৃত্ব। দেশের মাতৃত্ব রক্ষায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররা হাতে নিয়েছিল অস্ত্র, গোলাবারুদ। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেশকে রক্ষার্থে দরকার কলমের রাজনীতি। প্রয়োজন জ্বালাময়ী সুগঠিত আদর্শ নীতিকে সমুন্নত রেখে সরকার ও জনগণের হয়ে কাজ করা।

ছাত্র সমাজ বিশ্বাস করতে চায় রাজনীতিবিদরাই দেশ ও জাতির প্রত্যক্ষ আস্থাবান হবেন। নেতা-নেত্রীদের দায়িত্বহীন আচরণ ভবিষ্যৎ অধিনায়কদের ক্রমে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেলার যাদুশক্তির মত। এই অন্ধকার থেকে আলোর পথের যাত্রা শুরু করতে হবে এখনই। রাজনীতিতে ক্ষমতার পালা বদলের কষাকষি থাকবেই। তবে তা হোক বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন ও যৌক্তিক। নেতা-নেত্রীদের মন্তব্য ভাবনা হোক অনেক বেশি স্বচ্ছ ও সুগঠিত। রাজনীতি আদর্শিক জায়গায় ফিরে আসতে পারলে এমন পরিবর্তন সম্ভব। বর্তমান অনেক অভিভাবকগণ তাদের ছেলেদের কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে বারণ করেন। তাদের মনে ভয় কাজ করে রাজনীতি মানেই মারামারি আর সংঘর্ষ। দুশ্চিন্তা থাকে ছেলে হারানোর। শুধু তাই নয়, সাধারণ বহু ছাত্রদের মাঝে নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার সুপরিচালিত এই পথ সম্পর্কে বিরুপ ধারণা রয়েছে।

প্রত্যেক ক্ষমতাশীন কিংবা বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে সুনজরদারি করতেই হবে। রাজনীতি পুরোটা সহিংসতা এবং ‘জোর যার মুলুক তার’ এ রকম চিন্তা পোষণকারী অভিভাবকগণ ও সাধারণ শিক্ষার্থীর সম্মুখে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি ভীতসন্ত্রস্ত পরিস্থিতি দূরীকরণে নানান সন্তোষজনক পদক্ষেপ অতীব জরুরী।

খুব অল্প সময়ে বহু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আজকের ছাত্রদের নেতৃত্ব গুণেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিশ্ব কাতারে প্রথম সারির অর্থাৎ উন্নত দেশ হবে এটাই প্রত্যাশা।

কারণ একটি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পিছনে স্থিতিশীল রাজনীতি একটি বড় রকমের ভূমিকা যে পালন করে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। সেজন্য চাই শুদ্ধ ও প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি চর্চা।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সহিংস,ছাত্র রাজনীতি,বন্ধ,হোক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close