এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ৩০ মে, ২০১৮

শূন্য থেকে কোটিপতি

শুটিং ও রেস্তোরাঁর আড়ালে আসলামের অপরাধ জগৎ

এতদিন আড়ালেই ছিলেন রাজশাহীর মাদক সম্রাট আসলাম সরকার। শুটিং ও রেস্তোরাঁর ব্যবসার আড়ালে তিনি যে জমিয়ে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত, সেটা সংশ্লিষ্টদের বাইরে কেউ আন্দাজও করতে পারেনি। সম্প্রতি কক্সবাজারের কলাতলী এলাকা থেকে লক্ষাধিক ইয়াবাসহ গ্রেফতারের বিষয়টি জানাজানির পর রাজশাহী নগরীতে চলছে তোলপাড়।

বেরিয়ে আসছে আসলাম সরকারের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য। মানুষ জানতে পারছে কী করে শূন্য থেকে কোটিপতি হলো আসলাম। স্থানীয়রা জানায়, পাঁচ বছর আগেও যে আসলাম দোকানে বাকি খেতেন। সেই বাকির টাকা আজও পরিশোধ করেননি। ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত হওয়ার খবরে এলাকাবাসী বুঝতে পারছে হঠাৎ কেন আসলাম আঙুল ফুলে কলাগাছ হলো। কারণ এখন আসলাম সরকার শতকোটি টাকার মালিক।

সূত্র মতে, নগরীর রাজপাড়া থানাধীন ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনি এলাকার আজিজুল আলমের ছেলে আসলাম সরকার। রাজশাহীর এই ইয়াবা স¤্রাট টাকা দিয়ে বিভিন্ন মহলের মুখ বন্ধ করে গড়ে তুলেছিল বিশাল মাদক নেটওয়ার্ক। শুধু ইয়াবা নয়, মাদক জগতের সবকিছুই থাকত তার কাছে। কারণ, তিনি কাইসার রহমান চৌধুরী (রাজশাহী মেডিকেল কলেজ) মিলনায়তনসংলগ্ন ঘোষপাড়া মোড়ের তিন তলা ভবনে গড়েছেন ‘সরকার প্রোডাকশন হাউস’।যেখানে কথিত মডেলদের এনে চালাতেন অসামাজিক কার্যকলাপ। এই সরকার প্রোডাকশন হাউসের পাশের তিনতলা ভবনও নিয়েছেন তিনি। সেখানে গড়ে তুলেছেন রেস্তোরাঁ ‘ব্ল্যাক ক্যাফে’। এই দুই ভবনে ছিল তরুণ-তরুণীদের অবাধ বিচরণ।

স্থানীয়দের ভাষ্য, মুখোশের আড়ালে আসলামের যাবতীয় কর্মকাণ্ড এখন উন্মোচিত হচ্ছে। একে একে বেরিয়ে আসছে সব অজানা তথ্য। তার ‘ব্লাক ক্যাফেটি’ তেমন জনপ্রিয় নয়, খাবারের মানও ভালো নয়। অন্যসব রেস্তোরাঁর মতো এখানে ভোজনরসিকদের উপচেপড়া ভিড়ও থাকে না।

তবে যাতায়াত ছিল উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের। যাদের পোশাক-আশাক সাধারণের মতো নয়। এরা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মরণ নেশায় আসক্ত বলে ধারণা স্থানীয়দের। এখানে নির্বিঘ্নে দেহ ব্যবসা চলত বলেও মনে করছেন তারা। আসলাম সরকারের আটকের খবরে এই দু’টি ভবনের বাইরেই তালা ঝুলতে দেখা যায়। অথচ, মানুষ জানত একটি ভবনে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ ও অপরটিতে ছিল রেস্তোরাঁ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দোকানি বলেন, ‘ব্ল্যাক ক্যাফে’ আর ‘সরকার প্রোডাকশন’ হাউসে রাতভর চলত উঠতি বয়সীদের আড্ডা। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং রাজশাহীর ধনীর দুলাল-দুলালিদের ছিল নিয়মিত যাতায়াত। পুলিশ-প্রশাসন এই দু’টি প্রতিষ্ঠানে কখনো অভিযানও চালাননি। বাইরে থেকে সবসময় বন্ধ করে রাখা হয়। অপরিচিত কাউকেই এই ক্যাফের মূল অংশে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।

মডেলিংয়ের আড়ালে বিত্তশালী পরিবারের ছেলেমেয়েরা সেখানে যেত মাদক সেবনে। এরপর ব্ল্যাক মেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। রাজশাহী নগরীতে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়িও রয়েছে আসলামের। কিনেছেন দামি প্লট। ঘোরেন অত্যাধুনিক মডেলের গাড়িতে। তার সম্পর্কে জানতে মাঠে নেমেছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা।

জানা গেছে, আসলাম সরকার ছিলেন একটি টেলিফোনের দোকানের কর্মচারী। ৪০ বছর বয়সেই ছয় থেকে সাতটি বিয়ে করেছেন। রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত মামলাও রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ব্ল্যাক ক্যাফে থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের মাদক সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। পুলিশের খাতায় নিখোঁজ মোস্ট ওয়ানটেড রাজশাহী অঞ্চলের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বাঘা উপজেলার কালাম মোল্লার সঙ্গে রয়েছে আসলামের সখ্য।

উল্লেখ্য, গত ২৩ মে কক্সবাজারের কলাতলীর সার্ফিং এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহীগামী আসলাম সরকারের মাইক্রোবাস তল্লাশি চালায় র‌্যাব-৭। সে সময় তার গাড়ি থেকে এক লাখ আট হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। আটক হয় আসলাম ও মাইক্রোতে থাকা কথিত শুটিং টিমের আট তরুণ-তরুণী।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘আসলামের ব্যাপারে আমরা খোঁজ নিতে শুরু করেছি। সে অত্যন্ত কৌশলী আর চতুর। তার মাদক ও নারী নেটওয়ার্ক এবং সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ আর তাকে সহায়তাকারী পুলিশ সদস্যদেরও খোঁজা হচ্ছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইয়াবা,শুটিং ও রেস্তোরাঁর আড়ালে ব্যবসা,রাজশাহী,মাদক সম্রাট,আসলাম সরকার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist