শিল্পী হাশেম খানের প্রদর্শনী ‘জোড়াতালির চালচিত্র’
বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। শিল্পকলার সব মাধ্যমেই তিনি কাজ করে চলছেন। আশ্চর্য সব ভাস্কর্যও তৈরি করেছেন হাশেম খান। স্বাভাবিক রং ক্যানভাসের পরিবর্তে, কোলাজ মাধ্যমে কাঠকে প্রধান্য দিয়ে কিছু জোড়াতালির কাঠচিত্র ভাস্কর্য ও অন্যান্য শিল্প সম্ভার তৈরি করে উপস্থাপন করেছেন শিল্পী হাশেম খান। গতকাল শুক্রবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কীর্তিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খানের প্রদশর্নীর উদ্বোধন করা হয়।
নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলেও, এর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা ছিল জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে। যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক' মুনতাসীর মামুন। সভাপতিত্ব করেন শিল্প সমালোচক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। স্বাগত বক্তব্য দেন হাশেম খানের সহধর্মিণী পারভীন হাশেম। অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন হাশেম খান। প্রদর্শনীর নামকারণ করা হয়েছে ‘জোড়াতালির চালচিত্র’। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জাতীয় জাদুঘর এবং হাশেম খান-পারভীন ট্রাস্ট।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ ও ষাটের দশকের গণআন্দোলনে এবং ‘৬৯ গণঅভ্যুত্থানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগের যেসব আন্দোলন হয়েছিল, সে সময় থেকেই শিল্পী হাশেম খানকে চিনি। চারুকলার শিক্ষক, সরকারি চাকরি-এসবকে তোয়াক্কা না করে স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি এক সক্রিয় শিল্পী। আমাদের পোস্টার করে দিয়েছেন, ছবি এঁকে দিচ্ছেন, দাবিগুলোর ফেস্টুন করে দিচ্ছেন এবং একই সাথে বিদ্রোহী জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম-আন্দোলন করছেন।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান জাতিকে উপহার দিলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে হাশেম খান সংবিধান গ্রন্থটিকে অলংকৃত করে অনন্য কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। হাশেম খান ৭ই মার্চের ভাষণ, ৬ দফা এবং আমাদের জয় বাংলা’ তার সৃষ্টিশীল চিত্রকলায় বিবৃত করেছেন। তিনি বহুমাত্রিক একজন শিল্পী।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পী হাশেম খান এমন একজন শিল্পী যাকে আমরা পেয়েছি চারুকলার শিক্ষক হিসেবে, বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের বইয়ের অলংকরণে, বিশেষ করে শিশুদের পাঠ্য বইয়ের জন্য ছবি আঁকার একজন পারদর্শী ও নিষ্ঠাবান শিল্পী হিসেবে। তিনি একের পর এক জাদুঘর তৈরি করছেন, শিশু সংগঠন কচি-কাঁচার মেলাকে আন্দোলন করে শিশুদের দেশপ্রেমিক হওয়ার সাহস যুগিয়েছেন। শিশু চিত্রকলাকে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে প্রধান শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন।
জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লাতিফ চৌধুরী বলেন, দেশজ শিল্প থেকে সার-বস্তু সংগ্রহ করে আমাদের আধুনিক শিল্পচর্চা ইতিহাসের নানা কালখণ্ডে বিশেষ গতি পেয়েছে। শিল্পী হাশেম খান এ পরম্পরার মধ্য দিয়েই আধুনিকতার তত্ত্ব-তালাশ করে ফিরছেন শিল্পী জীবনের সূচনাপর্ব থেকে।
প্রদর্শনীতে জোড়াতালির কাঠচিত্র রয়েছে ১৪টি, কাঠ ভাস্কর্য রয়েছে ৩১টি, জোড়াতালি চিত্র রয়েছে ১৮টি; সব মিলিয়ে মোট ৭১টি শিল্পকর্ম রয়েছে হাশেম খানের এ প্রদর্শনীতে। যার মধ্যে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাশেম খানের তৈরি ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের ৮টি আলোকচিত্রও। শিল্পী হাশেম খানের ২৭ দিনের এ প্রদর্শনী চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
পিডিএসও/তাজ