মারুফ আহমেদ, কুমিল্লা

  ২৫ মার্চ, ২০২৪

কুমিল্লায় নামিদামি কোম্পানির মোড়কে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই 

কুমিল্লায় একটি কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ 

ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লায় ধুম পড়েছে সেমাই বেচাকেনার। ফলে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা বেড়েছে কুমিল্লার বিসিক শিল্প নগরীসহ জেলার প্রায় ২০টি সেমাই তৈরি কারখানায়। তবে সেমাই তৈরিতে কুমিল্লার অধিকাংশ কারখানা মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্যাঁতসেঁতে মেঝে, নোংরা এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হওয়া এসব সেমাই বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাতে কঠোর তদারকি প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় নামে-বেনামে বিভিন্ন কারখানায় ও সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেমাই উৎপাদন করে আসছে। প্যাকিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন নামিদামি ব্যান্ডের মোড়ক। কাশফুল ফুড প্রোডাক্টস, বিবির বাজার আদর্শ সদর কুমিল্লা, মেসার্স মক্কা কঞ্জুমার অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসের মতো শহরের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে এসব মৌসুমি সেমাই কারখানা।

জানা গেছে, প্রতিবছর রোজা শুরু হওয়ার এক মাস আগে থেকে সেমাই তৈরির প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন এসব কারখানার মালিকরা। ঈদ উপলক্ষে এসব সেমাই তৈরি করে রমরমা ব্যবসা করেন তারা। চিকন সেমাই বেশি তৈরি হয় কুমিল্লার বিভিন্ন কারখানাগুলোতে। তবে ঈদের পর পর অধিকাংশ কারখানা মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নেন।

সোমবার (২৫ মার্চ) সরেজমিনে আর্দশ সদর উপজেলার বিবিরবাজার এলাকার কাশফুল ফুড প্রোডাক্টস নামে একটি কারখানায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের সেমাই তৈরি করছে। তবে ব্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানি নামে তারা প্যাকেট করে বাজারজাত করছেন। আট থেকে নয়জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার সুযোগ নেই । শ্রমিকদের কেউ ময়দার খামি তৈরি করছেন। কেউ বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রে সেমাই বানাচ্ছেন। আবার কয়েকজন শ্রমিক সেমাই কারখানার ছাদে নিয়ে বাঁশের মাচা তৈরি করে রোদে শুকাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরির কোনো চিত্র দেখা যায়নি সেখানে। নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই সেমাই উৎপাদন, শুকানো ও প্রক্রিয়াজাত চলছে। কর্মব্যস্ত শ্রমিকদের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। আর ঘর্মাক্ত শরীরে কাঁধে করে এসব সেমাই রোদে শুকাতে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।


  • ব্যস্ততা বেড়েছে জেলার প্রায় ২০টি সেমাই তৈরি কারখানায়
  • ৩৫ কেজি সেমাইয়ের টুকরি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা

কাশফুল ফুড প্রোডাক্টাসনের মতো নামে বেনামে জেলার মুরাদনগর, চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণ, লাকসামে আরো ১০টি কারখানার একই চিত্র দেখা যায়। এসব সেমাই কুমিল্লার নগরীসহ ঢাকায় ট্রাকে ভরে সেমাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি টুকরিতে ৩৫ কেজি সেমাই থাকে। প্রতি টুকরি ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেমাইয়ের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এক টুকরি সেমাই তৈরিতে গত বছর শ্রমিকরা ৯০ টাকা নিতেন। এখন নিচ্ছেন ১০০ টাকা। সেই সঙ্গে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। আশপাশের বাজারে গত বছর ভ্যানে চেপে সেমাই পাঠাতে প্রতি টুকরিতে খরচ পড়ত ২০ টাকা। বর্তমানে খরচ হচ্ছে ৩৫ টাকা। তাই বাংলা সেমাইয়ের দামও বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে প্রতি টুকরি সেমাইয়ে বেড়েছে ২০০ টাকা।

ক্যাব কুমিল্লার সভাপতি জহিরুল হক দুলাল বলেন, রমজান এলে লাইসেন্স বিহীন বেনামি কিছু প্রতিষ্ঠান সেমাই তৈরি করে। এ বিষয়ে গত বছরও বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম। কোনো প্রতিকার মেলেনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা উপপরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার উপমহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মনিটরিংয়ে কোনো অনিয়ম পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কুমিল্লার উপপরিচালক (সিএম) কেএম হানিফ বলেন, খোলা আকাশের নিচে সেমাই শুকানো যাবে না। ফ্লোরে প্যাকেট করা যাবে না। নোংরা পরিবেশে উৎপাদন করা যাবে না।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কুমিল্লা,অস্বাস্থ্যকর,পরিবেশ,সেমাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close