প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কাউখালী ও আনোয়ারায়

মা-বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষায় বসল ৩ শিক্ষার্থী

ছবি: সংগৃহীত

সন্তানের কাছে মা ও বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন। পরম নির্ভরতার স্থান। মা-বাবার মৃত্যু সন্তানের কাছে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার সমান। এরকম কঠিন সময় সব সন্তানের জীবনেই আসে। এমন পরিস্থিতিতে পিরোজপুরের কাউখালী ও চট্টগ্রামের আনোয়ায় তিনজন পরীক্ষার্থী বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত এসএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

কাউখালী (পিরোজপুর) : মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে এসএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দিয়েছে সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিক নামের দুই ভাই। পরীক্ষা শেষে দুই ভাই বাড়িতে ফিরে মায়ের মরদেহ দাফনে অংশ নেয়। দুই ভাই পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের জোলাগাতী গ্রামের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মল্লিকের ছেলে। তারা জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর ভিটাবাড়িয়া নূরজাহান মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ভাণ্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে তারা পরীক্ষা দেয়। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বৃহস্পতিবার দুই ভাই পরীক্ষা দেওয়া।

বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সাইফুল ও আসাদের মা শাহানা বেগম (৫৫)। অবস্থার অবনতি হলে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে তাকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে শাহানা বেগমের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে কান্নায় ভেঙে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী দুই ভাই। স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দেন। স্বজনদের কথায় মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যায় দুই ভাই। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে তারা বের হয়ে মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণ করে।

কেন্দ্র সচিব ও ভাণ্ডারিয়া বন্দর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ও আসাদ মল্লিকের মায়ের মৃত্যুর সংবাদটি খুবই মর্মান্তিক। আমি ও তাদের কক্ষের পর্যবেক্ষক কেন্দ্রে তার খোঁজখবর রেখেছি। তাদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে।

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখে এসএসসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে রিফা আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী। সে রায়পুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবসাশিক্ষা বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার আনোয়ারা উপজেলার বটতলী শাহ মোহসেন আউলিয়া রহ. উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রফিার বাবা আহমদে নবী। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তার বাবার জানাজার সময় নির্ধারণ করেন স্বজনরা। আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও শিক্ষক তাকে সান্ত্বনা দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠায়। সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

বটতলী শাহ মোহসেন আউলিয়া রহ. উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে রিফা নামে এক শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায় তার বাবা মারা গেছে, জানাজা ১১টায়। তাই পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বাড়ি চলে যেতে চায়। তাকে সান্ত্বনা দিলে মনোবল শক্ত রেখে সে পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং দেড় ঘণ্টার মধ্যে লেখা শেষ করে বাড়ি চলে যায়। ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আশা করি রিফা তার বাবার আশা পূরণ করবে।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কাউখালী,আনোয়ারা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close