রাসেল মাহমুদ, নন্দীগ্রাম (বগুড়া)

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নন্দীগ্রামে মানববন্ধন

মামলার আসামি ও বহিষ্কৃত শিক্ষককে অধ্যক্ষ নিয়োগ

নন্দীগ্রাম পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডের বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মানববন্ধন শেষে মিছিল করেন বিক্ষুব্ধরা। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

বগুড়ার নন্দীগ্রামে নাশকতা চেষ্টা মামলা আসামি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষককে মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে অধ্যক্ষসহ তিন পদে নিয়োগে অর্ধ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদ্য যোগ দেওয়া অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

এর প্রতিবাদে ‘সচেতন নাগরিক’ ও ‘পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ’ ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে গভর্নিং বডির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কামরুল হাসান সবুজ এবং সদ্য যোগ দেওয়া অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশিদ তোতা মিয়ার অপসারণ দাবি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নন্দীগ্রাম পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ডের বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকায় এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ করেন অংশগ্রহণকারীরা।

জানা গেছে, মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মাহবুবুর রশিদ তোতা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে স্থানীয় থানায় দায়ের করা নাশকতা মামলার আসামি। এছাড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সিহালীর পীরব ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ থেকে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আয়নাল হক, দুলাল হোসেন, শাহিনুর রহমান, হযরত আলী, রাশেদুল ইসলাম লিটন, ফজলুর রহমান, ফারুক হোসেন, ওসমান মোল্লা, শাহাদত হোসেন মিঠু, রুবেল হোসেন, এরফান আলী, আজমীর হোসেনসহ অন্যরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর প্রচারকালে গাড়িবহরে হামলা, ককটেল বিস্ফোরণসহ মোটরসাইকেল পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশিদ তোতা মিয়া। এসব অভিযোগে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে নন্দীগ্রাম থানায় করা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া মাহবুবুর রশিদ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ছিলেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ, চাকরি বিধি ভঙ্গ করাসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সাময়িক বরখাস্ত হন।

সাময়িক বহিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত করেন পীরব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাসিমা আকতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘পীরব কলেজেও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের আবেদন করেছিলেন উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বোর্ড বাতিল করা হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত চিঠিতে মাহবুবুর রশিদের টাকা আত্মসাৎ করাসহ অনিয়মের ব্যাপারে অবহিত করা হয়।’

এদিকে কলেজ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে এক বছরের স্থলে অবৈধভাবে আড়াই বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন মঞ্জুয়ারা খাতুন। পরে তার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে গভর্নিং বডির সভাপতি পদ নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সবুজ। এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ অক্টোবর বগুড়ার আদালতে মামলা করেন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎসাহী সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহসীন আলী।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশিদকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

এর আগে, শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি কামরুল হাসান সবুজ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই মাহবুবুর রশিদকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। তবে তার বহিষ্কার ও মামলার আসামি হওয়ার বিষয়টি জানতাম না।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বগুড়া,নন্দীগ্রাম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close