কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

ঢলুবাঁশ কমে চুঙ্গাপিঠা বানানোও আর হয়না

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলুবাঁশ। মৌলভীবাজারে যা আগের মতো এখন দেখা যায় না। আগে বাজারে মাছের মেলা বসতো। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদীর হতে বড় মাছ ধরে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিলো এখানকার অন্যতম ঐতিহ্য। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদ ও হয় না।

জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগর, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। চুঙ্গাবাড়ী ও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যুদর কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় কমে গেছে ঢলুবাঁশ। জেলার কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

আরো জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা দুরবর্তী এলাকা থেকে ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজার সমুহে বিক্রির আশায়। ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। এ বাঁশে অত্যাধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। এর চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা করা হয়। কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমানে খেড় (নেরা) দরকার পড়ে। খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি।

পিঠা তৈরি করার জন্য মুন্সীবাজারে ঢলুবাঁশ নিতে আসা সাজিদুর রহমান সাজু বলেন, ‘আসলে সব সময় তো এই জিনিসগুলো পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো খুব কম পরিমান বাজারে উঠেছে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে প্রচুর দেখা যেতো।’

পিঠার উপকরন ঢলুবাঁশ নিয়ে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারে আসা রসময় মল্লিক বলেন, ‘আমি ৩ হাজার ঢলুবাঁশ নিয়ে বাজারে আসছি। আগে অনেক বাঁশ আনতাম এখন তেমন চলে না। মানুষ আগের মতো নেয়ও না। ১০০ বাঁশের দাম ১২০০ টাকা।’

কমলগঞ্জ উপজেলার লেখক-গবেষক ও উন্নয়ন চিন্তক আহমদ সিরাজ জানান, ১০-১৫ বছর আগেও কম-বেশি সবার বাড়িতে ঢলু বাঁশ ছিল। এক সময় এই ঢলুবাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধুম লেগেই থাকতো। এখন আর চোখে পড়ে না।

পিডিএস/এস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মৌলভীবাজার,সিলেট,চুঙ্গাপিঠা,ঢলুবাঁশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close