আমিনুল ইসলাম রানা, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ

ফেরিতে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য, নেই পুলিশি পাহারা

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ কয়েক হাজার গাড়ি ফেরিপারাপার হয়। সার্বক্ষণিক ফেরিসার্ভিস চালু থাকলেও চলাচলকারী ফেরিগুলোতে নিয়মিত পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে ওই নৌপথে দুর্বৃত্তদল ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি রাতে সেখানে চলন্ত ফেরিতে জুয়ার আসর, ছিনতাই ও পকেটমারের ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তদের শিকার হয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন ফেরিযাত্রীদের অনেকে।

এদিকে, নৌপথের নিরাপত্তা রক্ষায় দৌলতদিয়া পাটুরিয়া উভয় ঘাটে নৌপুলিশের পৃথক দুটি ফাঁড়ি রয়েছে। তা সত্ত্বেও তিন কিলোমিটার ওই নৌপথ অনেকটা ‘অরক্ষিত’ অবস্থায় রয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির বলেন, ‘দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়ায় নৌপুলিশের দুটি ফাঁড়িতেই ফোর্স সংকট রয়েছে। পাটুরিয়া ঘাট ফাঁড়িতে কোনো স্পিডবোট নেই। দৌলতদিয়া ঘাট ফাঁড়ির একটি স্পিডবোট থাকলেও দীর্ঘ দিন তা বিকল হয়ে আছে। তাই ফেরিসহ নৌপথে নিয়মিত পুলিশি টহল ব্যবস্থা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চলন্ত ফেরিতে জুয়া, ছিনতাই ও পকেটমার দলে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’


  • ফোর্স সংকটে নৌপুলিশের দুই ফাঁড়ি
  • পাটুরিয়া ঘাট ফাঁড়িতে নেই স্পিডবোট

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট অফিস ও ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। ওই নৌপথে দিন-রাত সার্বক্ষণিক ফেরিসার্ভিস চালু থাকলেও চলাচলকারী ফেরিগুলোতে নিয়মিত পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা নেই। এ সুযোগে উভয় ঘাট এলাকার দুর্বৃত্তরা রাতে ট্রলার নিয়ে এসে যাত্রীবেশে ফেরির ভিতরে মোমের আলো জ্বালিয়ে নিজেদের মধ্যে নগদ টাকার জুয়া খেলার আসর বসায়। প্রলুব্ধ হয়ে ওই জুয়ায় অংশগ্রহণ করে ফেরিযাত্রীদের অনেকেই। জুয়ার ফাঁদে ফেলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয়। ঘাটে ভেরার আগেই চলন্ত ফেরি থেকে ট্রলারে নেমে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘এই নৌরুটে রাতের বেলা চলাচলকারী ফেরিগুলোতে যাত্রীনিরাপত্তায় পুলিশি পাহারা থাকা খুব জরুরি।’

রো রো (বড়) ফেরির মাস্টার (চালক) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই নৌরুটে চলন্ত ফেরিতে জুয়ার আসর বসানো, ছিনতাই ও পকেটমারের বিষয়টি নতুন নয়। দিনের আলোয় না থাকলেও রাতের অন্ধকারে দুর্বৃত্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

ঘাটসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফেরিতে জুয়ার আসর ও ছিনতাইকালে দুর্বৃত্তরা রামদা, ছুরি ও চাইনিজ কুড়াল ব্যবহার করে থাকে। তাই ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। জুয়া-ছিনতাই চক্রের প্রধান হোতা মাদার কাজী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের শাহাদত মেম্বারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। তাদের বাড়ি রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জে। এছাড়া দৌলতদিয়া পাটুরিয়া উভয় ঘাট এলাকার কতিপয় অসাধু ট্রলার মালিক ও চালক ওই দলের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ ওই সূত্রের।

গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ জানিয়েছে, মাদার কাজীর বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও মানিকগঞ্জের শিবালয় থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজবাড়ী,গোয়ালন্দ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close