জামালপুর প্রতিনিধি

  ০৩ জুন, ২০২৩

জামালপুরে অবৈধ বালু উত্তোলন, নষ্ট হচ্ছে যমুনা সার কারখানার রাস্তা

জামালপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সরকার দলীয় স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বালুবাহী ট্রাকের কারণে যমুনা সারকারখানার রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর রেলক্রসিং থেকে যমুনা সার কারখানার এক নম্বর জেটি ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার সড়ক যমুনা সার কারখানার মালিকানাধীন। আর এই সড়কের পাশ দিয়ে পাহাড়ের মতো স্তূপ করা হয়েছে বালু। আওনা চর, স্থল পশ্চিমপাড়া এলাকায় যমুনা নদী থেকে ১৫-১৬টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু খনন করে পাহাড়ের চূড়ার মতো বালুর স্তূপ গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি ট্রাক বালু দুই হাজার ৪০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

বালু উত্তোলন একদিকে যেমন স্থানীয় রাস্তা ও ফসলি জমিতে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় পরিবেশের ওপর বিরোপ প্রভাব পড়ছে। এর জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন পরিবেশকর্মীরা।

এলাকাবাসীর দাবি, মাঝে মধ্যে অভিযান হলেও সেটি লোক দেখানো।

তারা জানান, নদীর মাঝে অবৈধ মিনি ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালি উত্তোলনকারীরা হলেন, শাহাজামাল, রহিম, হায়দর, বাবু, সাইফুল, ফরহাদসহ ১২-১৫ জনের একটি দল। তারা সবাই স্থানীয় এমপি ডা. মুরাদ হাসানের সমর্থক বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। বছর খানেক আগে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সময় মারধর ও লাঞ্চিতের শিকার হন সহকারী কমিশনার ভূমি ও তার সাথের কর্মচারী ও পুলিশ সদস্যরা। বালু ব্যবসায়ীরা এতোটা শক্তিশালী যে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধ কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।

এ কারণে স্থানীয় সাধারণ মানুষ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান। অপরদিকে দৌলতপুর রেলক্রসিং থেকে যমুনা সারকারখানার জেটি ঘাটের সড়কটি সার পরিবহন ও মানুষের দৈনন্দিন চলাচলের জন্য হলেও বতর্মানে সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক ট্রাক চলাচল করে। ফলে রাস্তায় বালু পড়ে স্তর পড়ে যাওয়ায় চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ভ্যানচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, দৌলতপুর রেলক্রসিং তিন রাস্তার মোড় থেকে জেটি ঘাট পর্যন্ত পিচ ঢালা রাস্তা। বর্তমানে বালুবাহী ড্রাম ট্রাকের কারণে সড়কটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের।

এলাকার আজিজুল হক বলেন, “নেতারা মেশিন লাগাইয়া বালু তুলতাছে। সাধারণ মানুষরা সাহস পাবো ব্যবসা করবার। ওরাই করে, কিছু বলতে গেলে হুমকি দেয় তারা”।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষক বলেন, “আমার তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। দিন দিন মেশিনে মাটি কাটায় খেত আমার দহ হয়ে গেছে গা। কিছু কইতে গেলে এলাকার থাকবার দিব না”।

বালু ব্যবসায়ীদের একজন জানান, সরিষাবাড়ীর প্রভাবশালী এক কাউন্সিলরের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমঝোতায় এসব বালু তোলা হচ্ছে। তিনিই সকল কিছু ম্যানেজ করেন।

বালুর ট্রাকে রাস্তা নষ্ট প্রসঙ্গে যমুনা সার কারখানার জিএম দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সার পরিবহনে সড়কের যে পরিমাণ ক্ষতি না হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বালু পরিবহনে। এসব বন্ধে ডিসি, এসপি, উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি।

সরিষাবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে জেলা প্রশাসকের সঙেগ কথা বলে বেশি লোক নিয়ে যেতে হবে সেখানে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জামালপুর,অবৈধ বালু উত্তোলন,যমুনা সারকারখানার রাস্তা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close