বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভাষা দিবসে দুই বাংলার মিলন মেলা

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

যশোরের বেনাপোল নোম্যান্সল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই বাংলার ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা। কাঁটাতারের বেড়া ভুলে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায়। মানুষের ঢল থামাতে বিএসএফ এবং বিজিবি বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নোম্যান্সল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দুই দেশের মন্ত্রী ও এমপিরা।

ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে দুই বাংলার মানুষ একই মঞ্চে তুলে ধরেন বাংলা ভাষার জয়গান। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে ফুলের ডালিতে ভরে যায়।

‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি। ভাষা দিবসের এই দিনে থাকে না কোনো জড়তা। জয় বাংলা ধ্বনি দিতে আমাদেরও মন চায়। আমরা চাই না কাঁটাতারের বেড়া। মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকতে চাই, যেমনটি করেছেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা।’ এভাবেই মনের আকুতি প্রকাশ করছিলেন বারাসাত থেকে আসা দীলিপ বাড়ুই, হাবড়ার নমিতা দেসহ অনেকেই।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল নোম্যান্সল্যান্ডে শহীদ বেদির পাদদেশে পৌঁছালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক শ্রীমতি বীনা মণ্ডল, বনগাঁও পৌর চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ, সাবেক সাংসদ মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বে ভারত থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশিদের ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নেয়।

এ সময় ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল, ২১ উদযাপন কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু ও সচিব শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, ভারতের পক্ষে বিশেষ অতিথি বনগাঁও পৌরসভার মেয়র গোপাল শেঠসহ অনুষ্ঠানে উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর দুই দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। দুই দেশের জাতীয় পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। দুই বাংলার মানুষের এ মিলন মেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ যেন ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য। ফুলের মালা, মিষ্টি ও ফুল বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ বাঙালির নাড়ির টানে একজন অপরজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা।

৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। দুই দেশের নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্ত করবে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেনাপোল,মিলন মেলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close