মো. আশরাফুল আলম সাজু, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম)

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী ঠাঁটমারী বধ্যভূমি

রাজারহাটের ঠাঁটমারী বধ্যভূমি। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী সারাদেশের মতো কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালায়। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজারহাট উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

স্থানীয় রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহায়তা ও সহযোগিতায় এ অঞ্চলের অসংখ্য নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে এসে হত্যা ও অসংখ্য মা বোনের সম্ভ্রমহানী করা হয় এই ঠাঁটমারীতে।

রাজারহাট উপজেলা সদর থেকে জেলা শহর কুড়িগ্রাম যেতে পাকা রাস্তার ধারেই রেললাইন সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানে নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ চেতনা।

এখানে প্রতি বছর বিশেষ দিবস যেমন- ডিসেম্বর মাস এলেই বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয় বধ্যভূমি প্রাঙ্গণ, উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এই বিষয়ে কথা হয় এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক মনসুর আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ঠাঁটমারী এলাকায় কোনো বসতি ছিল না। এখানে জঙ্গল ছিল, দিনেও লোকজন যেতে ভয় পেত। জায়গাটি রাজারহাট রেল স্টেশন ও টগরাইহাট রেল স্টেশনের মাঝামাঝি থাকায় রেল যোগাযোগ ভালো হওয়ায় পাক হানাদার বাহিনী এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে এসে নিষ্ঠুর নির্যাতন করে হত্যা করেছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, বধ্যভূমি এলাকা অত্যন্ত সাজানো গোছানো, আকর্ষণীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানটি প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনাথীর পদচারনায় মুখরিত হয়। ঠাঁটমারী বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটিতে পাথরে খোদাই করা আছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলী, গোলজার হোসেন, আকবর হোসেন, হৃতেন্দ্র নাথ, জয়নাল আবেদীন, ভোলা নাথ, আজিজার রহমান, নুরুল হক, আ. সামাদ, জয়নাল আবেদীন ও আব্দুল জব্বারের নাম। এছাড়াও নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধাসহ শত শত সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয় এখানে।

কথা হয় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা রজব আলীর (৬৫) সঙ্গে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঠাঁটমারীতে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের নাখেন্দা মৌজায় একটি পারিবারিক বধ্যভূমিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার দাবি জানান।

কুড়িগ্রাম গণপূর্ত অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে প্রায় ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজারহাটের ঠাঁটমারী বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন রাজারহাটের সৌন্দর্যবর্ধনসহ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে তাসনিম জানান, ঠাঁটমারী বধ্যভূমিটি উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে আছে। এর সৌন্দর্যবর্ধন, রাতে আলোর ব্যবস্থাসহ পবিত্রতা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী,ঠাঁটমারী বধ্যভূমি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close