রাজশাহী ব্যুরো

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২২

বিভাগীয় গণসমাবেশ

আগেভাগেই রাজশাহীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা

রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশস্থলের কাছেই বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য খিচুড়ি রান্নায় আয়োজন - প্রতিদিনের সংবাদ

রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আশপাশের জেলার রাজশাহীগামী সকল গাড়ী ও মাইক্রোবাস থামিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সমাবেশে যাওয়ার পথে পথে পুলিশী তল্লাশী, বাধাসহ হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে গণসমাবেশ করবে বিএনপি।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশের দুই দিন আগে থেকেই বুধবার থেকেই নগরীর মাদ্রাসা মাঠে আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। এদিন রাতে ফায়ার সার্ভিস মোড় ও মুক্তমঞ্চ শাহ মখদুম ঈদগাহ রোডে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে বড় একটা অংশই নারী ও বয়স্ক লোক ছিল। সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে নানা ধরনের বাধা উপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। সমাবেশেকে ঘিরে মাদ্রাসা মাঠ এলাকায় এখন উৎসবের আমেজ।

বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের প্রাণ চাঞ্চল্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে সমাবেশস্থলের আশপাশ এলাকায়। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও আগতদের মেহমানদারিতে পার করছেন ব্যস্ত সময়। রাতভর নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল সংলগ্ন এলাকাতেই অবস্থান করেন।

বগুড়ার রমাজান আলী (৫৫) নামের এক বিএনপি নেতা বলেন, বগুড়া থেকে রওনা হওয়ার পর থেকেই পুলিশের বাধা শুরু। রাজশাহীর মোহনপুরে পুলিশ বাস আটকে দেয়। বাস আর এদিকে আসবে না বলেও জানিয়ে দেয় পুলিশ। আমাদের বাস ছাড়াও ২০/২৫টা বাস সেখান থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। নিরুপায় হয়েই যে যার মতো সমাবেশস্থল অভিমুখে ছোটেন। অনেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন।’

এদিকে, বুধবার রাতে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের জায়গা তৈরি করে দিচ্ছিলেন বিএনপির মহানগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব রকমের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের সব বাধা অতিক্রম করে বিএনপি নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারসহ সহকারী পুলিশ কমিশনারদের নিটক জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুরো বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন, তাই তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

শীত উপেক্ষা করে খোলা মাঠেই রাত কাটালেন বিএনপির নেতাকর্মীরা : রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে এসে খোলা আকাশ ও তাবুতে রাত কাটাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। খাবার হিসেবে কেউ খাচ্ছে চিড়া মুড়ি, কারো ভাগ্যে জুটছে খিচুরি। রাতে হিম শীতল তাপমাত্রা মাথায় নিয়েও সরকার পতনের আন্দোলনের জনসভা সফল করতে চায় তারা। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্যরা বলছেন, সরকার লিখিত অনুমতি দেয়ার পরেও কেন এতো বাধা।

রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ৩ ডিসেম্বর। ৮টি শর্ত সাপেক্ষে পুলিশের এবং জেলা প্রশাসকের অনুমতি মিলেছে এই সমাবেশে জন্য। তবে বৃহস্পতিবার ভোর ৬ থেকে তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বুধবার রাতেই বিভাগের আট জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী রাজশাহী এসে পৌঁছেছেন। সাথে নিয়ে এসেছেন বিছানা বালিশ, চাল, ডাল, চিরা, মুড়ির মতন শুকনো খাবার।

রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘট, দুর্ভোগে যাত্রীরা: রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাজশাহী থেকে কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। বাইরের কোনো বাসও রাজশাহীতে প্রবেশ করেনি। ঢাকাগামী কোচগুলোও সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এদিকে, বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস না চলায় অটোরিকশা বা ছোট বাহনে মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন। এজন্য তাদের বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। এছাড়া চাপ বেড়েছে ট্রেনে।

হাজারো নেতাকর্মী পায়ে হেঁটেই এসেছেন সমাবেশস্থলে : বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার একটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলিনুর রহমান আন্না জানান, বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হচ্ছে বলে আগের দিনই চারটি বাসে করে ৪০০ নেতা-কর্মী নিয়ে রওয়ানা দেন রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে। রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ বাস থেকে তাদের নামিয়ে দেয়। পুলিশ গাড়িগুলো আটকে রাখায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে সমাবেশস্থলে এসে পৌছান। এভাবেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা প্রায় সকলেই চাল, ডাল, মুড়িসহ অন্যান্য শুকনো খাবার নিয়ে বিভিন্ন বাধাঁ উপেক্ষা কওে সমাবেশস্থলে এসে পৌছান।

গণসমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের জন্য রান্না হচ্ছে সবজি-খিচুড়ি : রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের উদ্দেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের জন্য রান্না হচ্ছে সবজি-খিচুড়ি। সমাবেশের দুইদিন বাকি থাকলেও ইতোমধ্যে মাদ্রাসা মাঠে কয়েক হাজার নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেন। সমাবেশস্থলের পাশের ঈদগাহ মাঠে সকাল থেকে রান্না শুরু হয়। একসঙ্গে রান্না, খাওয়া ও আড্ডা দেওয়াসহ সব মিলিয়ে সেখানে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাহ মাঠে অস্থায়ীভাবে ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোতে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা অবস্থান করছেন। এছাড়া অনেকেই পদ্মার পাড়ে সময় কাটাচ্ছেন। ঈদগাহ মাঠের একপাশে বড় বড় হাঁড়িতে নেতাকর্মীদের জন্য রান্নার করছেন। সমাবেশে ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে আসা নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।

বিএনপির এক নেতা বলেন, আগামী শনিবার সমাবেশ। বৃহস্পতিবার মানুষ চলে এসেছে। এটা জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা কষ্ট করে আগে বাসে চলে এসেছি।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গণসমাবেশ মিডিয়া কমিটির মেম্বার গোলাম মোস্তোফা মামুন জানান, ইতোমধ্যে এক লাখ নেতাকর্মী এখানে এসেছেন। সমাবেশস্থলের পাশে ঈদগাহ মাঠে রান্না হচ্ছে। এছাড়া আশেপাশের এলাকায় রান্না হচ্ছে। সেখান থেকে রান্না করা খাবার মাঠে নিয়ে আসা হবে। এখানে বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই রান্না করছেন। কোথাও বাবুর্চি দিয়ে রান্না করানো হচ্ছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজশাহী,বিএনপি,গণসমাবেশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close