আব্দুর রহমান রাসেল, রংপুর

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

রংপুরে জাপার মনোনয়ন নিয়ে জল্পনা কল্পনা 

প্রতীকী ছবি।

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। রসিক মেয়র মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন বলে দাবি করছেন মহানগর জাপার নেতা কর্মীরা। তবে দলের নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, জাপার মহাসচিব কাউকে মনোনায়ন দিতে পারেন না। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নগর জুড়ে রাঙ্গা সমর্থকদের মটর সাইকেল শোডাউন।

জাপার চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ দেশে এলে চূড়ান্ত করবেন সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মনোনয়ন।

তবে ইতিমধ্যে নগরীর পাড়া মহল্লায় এবং চায়ের দোকানের আড্ডায় উঠেছে নানা গুঞ্জন। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। গত সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে রংপুরে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাঙ্গা বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিষয়ে মেয়র পদে কে কাকে প্রার্থী দিলো বলতে পারবো না, তবে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা আছে। রওশন এরশাদ এলে তা প্রকাশ করা হবে। তিনি আরোও বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাউকে মনোনয়ন দিতে পারেন না। যদি দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা সঠিক হবে না। গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেবেন।

এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনে যাকে লাঙল প্রতীক দেওয়া হবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান রাঙ্গা। এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুরে বর্ধিত সভায় মেয়র মোস্তফাকে জাপার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের আমার মনোনায়ন চূড়ান্ত করেছেন। আমি চুড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পর মনোনায়নপত্র তুলেছি। রংপুর সিটি করপোরেশনে একজন যাবে একজন আসবে। এটাই নিয়ম। আগামী ২৭ ডিসেম্বর সিটি নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জনগণের ভোটে যদি আবারও নির্বাচিত হয়ে আসতে পারি তাহলে নগরীর অসামাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব। আমি যে সিটি করপোরেশন আপনাদের মাঝে রেখে গেলাম, আমার অবর্তমানে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। পরবর্তী সময়ে যেই আসুক, তাকে সহযোগিতা করবেন।

গত (২০ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে করা মামলাকে মিথ্যা দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেল সাড়ে চারটায় নগরীর সেন্ট্রাল রোড দলীয় কার্যালয় থেকে জাতীয় পার্টি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ার দেন তারা।

এদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ পর্যন্ত মেয়র পদে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ মনোনয়ন ফরম তুলেছেন ৭ জন। তবে আলোচনায় থাকা জাতীয় পার্টির বহিস্কৃত নেতা আব্দুর রউফ মানিক সোমবার (সন্ধা ৭টা পর্যন্ত) মনোনয়ন ফরম তোলেননি।

এই নির্বাচনে এবার ৩৬টি কেন্দ্র এবং ৩২ হাজার ৫৭৫ জন ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা আফতাব হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়র পদে ৭ জন মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এর মধ্যে সোমবার তুলেছেন লতিফুর রহমান মিলন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। এছাড়া মনোনয়ন ফরম তুলেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিক লীগের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এম. এ. মজিদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল, জাকের পার্টির মো. খোরশেদ আলম, জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগরীর সাবেক আমীর মাহবুবার রহমান বেলাল এবং ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনি। এর মধ্যে জামায়াত নেতা বেলাল ও ব্যবসায়ী বনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী আলোচিত জাতীয় পার্টির বহিস্কৃত নেতা একেএম আব্দুর রউফ মানিক মেয়র পদের জন্য কোন মনোনয়নপত্র তোলেননি। কিন্তু রোববার চাউর হয়েছিল তার পক্ষে মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। এদিকে তিনি আদৌ মনোনয়নপত্র তুলবেন কিনা সে বিষয়টি কোন সূত্রই এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি। তবে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, মেয়র পদে তাকে তারা লড়তে দিতে চান না। ভোটের সময় তাকে তারা আমেরিকায় পরিবারের কাছে রাখতেও চান বলে জানায় সূত্রটি। কিন্তু একটি পক্ষ তাকে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দি¦তা করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্র আরও জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৭ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন জানিয়েছেন, এবার ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা বেড়েছে। গতবছর ১৯৩টি কেন্দ্র থাকলেও ৩৬টি বেড়ে এবার কেন্দ্র হয়েছে ২২৯টি। এছাড়াও এবার স্থায়ী ভোট কক্ষ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ আছে ১৯৩টি। গত ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার সংখ্যার তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৭৫ জন। গত বছর ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন ভোটার থাকলেও এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং মহিলা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও জানান, এখন পর্যন্ত প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমরা আইনানুগ, গ্রহনযোগ্য, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সকল ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। যেহেতু এই সিটিতে এবার সব কেন্দ্রে ইভিএমএ ভোট হবে, সে কারণে ইভিএম সম্পর্কে ভোটার এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের পরিচিত করে তুলতে সকল ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয়বারের মতো এই নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোট। দ্বিতীয় নির্বাচন ২০১৭ সালের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ১ লাখ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ইতোমধ্যেই তাকে জাতীয় পার্টির চুড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে রংপুরে কথিত আছে। আগামী ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিলের শেষ দিন। ৮ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৯ ডিসেম্বর দেয়া হবে প্রতীক বরাদ্দ। আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোট।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রংপুর,জাপা,সিটি নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close