নওগাঁ প্রতিনিধি

  ০২ জুন, ২০২০

লাশ দাফনে গ্রামবাসীর বাঁধা, নদীর ধারে কবর দিল পুলিশ

নওগাঁর বদলগাছীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া নাসিমা বেগম(২৫) নামে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকের লাশ দাফনে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। অবশেষে পুলিশ সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার তাজপুর গ্রামের ছোট যমুনা নদীর তীরে দাফন করে। নাসিমা বেগম তাজপুর গ্রামের মাসুদ আলীর মেয়ে।

জানা গেছে, নাসিমা বেগম দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এরপর জ্বর ও সর্দি নিয়ে গত ২৩ মে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে রোববার দুপুর দেড়টায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকলে রাতে সাড়ে ৮টায় বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে নাসিমা বেগমের মৃত্যু হয়। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় নিহতের মরদেহ গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর রাত ৩ টার দিকে গ্রামে নিয়ে আসা হলে গ্রামবাসী বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করেন। পরে পুলিশের সহযোগীতায় লাশ গ্রামে প্রবেশ করলেও কবর দেওয়ার কোনও জায়গা দেয়া হয়নি। এরপর বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় তাজপুর গ্রামের ছোট যমুনা নদীর তীরে বাঁধের পাশে নিহতের দাফন সম্পন্ন করেন। জানাজার নামাজ পড়ান উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ঈমাম আইয়ুব আলী।

এসআই আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রথমে গ্রামবাসীরা বাধা দিয়েছিল। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। গ্রামে কোনও কবরস্থান নেই। এমনকি নিহতের বাবার বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনও জমি নেই। নিহতের মামার জায়গা থাকলেও তারা দেননি।

তিনি বলেন, অবশেষে কেউ জায়গা দিতে রাজি না হওয়ায় আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে কিনে নেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকাবাসী রাজী হননি। এরপর বিকল্প জায়গা হিসেবে সরকারি জমিতে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কবর খুঁড়তে যে কোদাল ও সরঞ্জাম দরকার গ্রামবাসীরা তা দিয়েও আমাদের কোনও রকম সহযোগীতা করেননি। অবশেষে পুলিশ সদস্যরাই কবর খুঁড়ে লাশটি নদীর ধারে কবর দিয়েছি।

বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাইদুর ইসলাম কেটু বলেন, ওই তরুণী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি যে করোনায় আক্রান্ত এমন বিষয় গ্রামের কেউ জানতো না। এমনকি নিহতের আত্মীয়-স্বজনরাও না। রাতেই নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। নিহতের স্বজনরা তাদের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করতে দেয়নি। পরে রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় দাফন করেছে পুলিশ।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির বলেন, ওই নারী দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় থাকতেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর ফলাফল জানা যাবে। তবে নিহতের পারিবারিক এবং সরকারি কোন কবরস্থান না থাকায় পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজনের মাধ্যমে সরকারি জায়গায় যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নওগাঁ,লাশ,করোনা,দাফন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close