কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২১ আগস্ট, ২০১৯

শাহপরী দ্বীপের মানুষ ভালো নেই

৫ কিলোমিটার ভাঙা সড়কে পায়ে হেঁটে যাতায়াত শাহপরী দ্বীপবাসীর

শাহপরীর দ্বীপ, বাংলাদেশের একেবারের দক্ষিণ সীমান্তের নাম। কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এই দ্বীপটির অবস্থান।

দ্বীপে বসবাসকারী ৪০ হাজার অধিবাসীর মধ্যে বেশির ভাগেরই জীবিকার প্রধান উৎস মাছ ও লবণ চাষ। ২০১২ সালে প্রবল জোয়ার আর পরে ঘুর্ণিঝড়ে দ্বীপ রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় জীবিকা নির্বাহের এসব উৎস। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্বীপটি আরো বিধ্বস্ত হয়। এতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, গাছপালা বিলীন হয়। এরপর আর কিছু নেই, শুধু বিস্তৃত জলরাশি। চারপাশে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ।

সাগরের পানির তোড়ে ভাঙতে ভাঙতে সড়কের পরিবর্তে জলপথে পরিণত হয়েছে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরই মধ্যে দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মূলভুখণ্ড থেকে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ওই দ্বীপের মানুষ। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চায়। সেজন্য দরকার ৫ কিলোমিটার বিধ্বস্ত সড়কটি পুনর্নির্মাণের। তবে দ্রুত বিচ্ছিন্ন সড়কটি মেরামত করার আশ্বাস দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।

দ্বীপের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একসময় শতশত একর জমি থেকে উৎপাদিত লবণ, দু’চোখ জোড়া ক্ষেত, জেলেদের জালে শিকারে সাগরের মাছ আর মিয়ানমারের গরু ভর্তি ট্রাক চলে যেত শাহপরীর দ্বীপ থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেই সময় নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এসব খাত থেকে সরকার আর এখানকার মানুষ বছরে শতকোটি টাকা আয় করতো। কিন্তু সেইদিনগুলো এখন শাহপরী দ্বীপবাসীর জন্য শুধুই অতীত।

দ্বীপের বাসিন্দা ইসমাঈল সিআইপি জানান, গত সাত বছর ধরে দ্বীপ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত চলাচলের একমাত্র সড়কটি ভেঙে গেছে। এই সড়কে একটি ব্রিজ ও কয়েকটি কালভার্ট ধসে পড়ে। যে কারণে দ্বীপটি মূলভুখণ্ড থেকে ৭ বছর ধরে বিচ্ছিন্ন।

স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াহিয়া ও জাহেদ বলেন, কোনো মুমূর্ষ মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে টেকনাফ উপজেলা সদরে যাবে, সে সুযোগ না থাকার কারণে গ্রাম্য ডাক্তারের আশ্রয় নিতে হয়। আর ডেলিভারি রোগীদের বিপন্ন অবস্থায় সদরে নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

তারা আরো জানান, সাগরের আগ্রাসনে প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের কিছু অংশ খণ্ড খ আবার কিছু অংশ খালে পরিণত হয়েছে। যে কারণে দ্বীপের মানুষকে কিছুদুর পায়ে হেঁটে গিয়ে তারপর জলপথে যেতে হয়। বর্ষায় পানিতে আর শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা তাদের চলাচলে কষ্টের সীমা নেই। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা বারবার আশ্বাস দেন, কিন্তু নির্বাচনের পর জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আর খবর নেন না।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বলছেন, মাছের ট্রলার কিংবা স্পীড বোটে এখন এই এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার সময় বন্ধ হয়ে যায় এই যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, শাহপরীর দ্বীপে ভাঙা বাঁধের মুখ বন্ধ করে পানি প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। বাঁধের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে। তবে ভাঙা সড়ক সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, টেকনাফ-সাবরাং হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫.১৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটির দরপত্র একদফা বাতিল হয়েছে, দ্বিতীয় দফায় একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছেন। তবে তারা যাতায়াত খরচের জন্য ৯ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের কথা বলেছে। দরপত্রটি সুপারিশ কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। সুপারিশ কমিটি অনুমোদন দিলে কাজটি দ্রুত শুরু করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শাহপরীর দ্বীপ,বিধবস্ত সড়ক,টেকনাফ,ভাঙা সড়ক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close