রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর

  ১৮ জুলাই, ২০১৮

টেন্ডার ছাড়াই ভবন নির্মাণ!

অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

টেন্ডার ছাড়াই নির্মিত গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ভবন

টেন্ডার ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যালয়ে নতুন ভবন ও গেট। ভবন নির্মাণের জন্য কাটা হয়েছে বিদ্যালয়ের গাছ। এর জন্য নেওয়া হয়নি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি। এসব নির্মাণকাজে প্রকল্প কমিটি গঠন করা হলেও কোথায় কত টাকা ব্যয় হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি প্রকল্প কমিটির লোকজন। নির্মাণকাজ নিজে করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সরকারের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়েই তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

প্রধান শিক্ষকের দাবি, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে টেন্ডার ছাড়াই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বলছে, টেন্ডার ছাড়া বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই।

১৯৬১ সালে উপজেলার পৌর শহরের কালী মধ্যম তরফ এলাকার ছয়গন্ডা মৌজায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠিত হয় পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। বর্তমানে স্কুলটিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৩০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন এনামুল হক সরকার। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক।

স্থানীয় ও স্কুল সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পাঠদান ভবন সংকটের কারণে ২০১৭ সালে মার্চে স্কুলে নতুন পাকা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন প্রধান শিক্ষক এনামুল। এ সময় বিদ্যালয়ের ২টি রেইনট্রি ও ১টি মেহগুনি গাছ কাটা হয়। বর্তমানে ওই নির্মাণকাজ শেষের দিকে। এ দিকে ২০১৮ সালের জুন মাসে স্কুলের প্রবেশ পথে পাকা গেট নির্মাণের কাজ শুরু করেন এই প্রধান শিক্ষক। এ জন্য কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি, নেওয়া হয়নি কর্তৃপক্ষের অনুমতি। তবে এসব কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কমল কুমার রায়কে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

জানতে চাইলে ভবন নির্মাণ কমিটির প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ ফকির বলেন, আমি ভবন নির্মাণ কাজের প্রধান হলেও টাকার হিসাব প্রধান শিক্ষকের কাছে রয়েছে। যত টাকা ব্যয় হয়েছে সেটা তিনি নিজেই করেছেন। আর সরকারি অনুমতি ছাড়া যদি তিনি (প্রধান শিক্ষক) গাছ কেটে থাকেন তাহলে কীভাবে কি করেছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন। জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক একটি রেজিস্ট্রার খাতা দেখিয়ে দাবি করেন, ওই ভবনে ইতোমধ্যে ৩৭ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে আর গেট তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা। গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো দিয়ে স্কুলের বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষাসংক্রান্ত বিধি-বিধান ও পরিপত্র অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বাবদ বেশি অঙ্কের টাকা খরচের জন্য (যথা—বিল্ডিং, আসবাবপত্র, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জন্য খরচ ইত্যাদি) খবরের কাগজে দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করতে হবে এবং দরপত্র পরিচালনা কমিটি কর্তৃক অনুমোদন করিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া যাবে।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। ভবনটিতে ৫টি পাঠদান কক্ষ, ১টি ডিজিটাল ল্যাব, ১টি অফিস কক্ষ ১টি নামাজখানা রয়েছে। অপরদিকে প্রবেশপথ গেটের নির্মাণকাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল বলেন, প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হয়েও দলীয় কর্মসূচিতে আসেন না। কিন্তু দলের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে স্কুলে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, নিজের সুবিধার জন্য তিনি নির্বাচন না দিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে সেখানে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকেও জায়গা দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তিনি।

জানতে চাইলে অভিযুক্তি প্রধান শিক্ষক এনামুল হক সরকার বলেন, স্কুলের উন্নয়ন কাজে কোনো রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করেই টেন্ডার ছাড়া ভবন ও গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয় কথা বলতে প্রতিদিনের সংবাদ অফিস থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, টেন্ডার ছাড়া ভবন নির্মাণের অভিযোগ ওঠার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একাধিক স্থানীয় ও অভিভাবক জানান, ২০১৬ সালে স্কুলের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. ক্যাপ্টেন মজিবুর রহমান ফকির এমপি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও অনিয়ম কারণে স্কুলে গণভোটের আয়োজন করেন, তখন শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে অপসারণের জন্য ভোট দেন। কিন্তু এমপির মৃত্যুর পর প্রধান শিক্ষককে অপসারণের প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। সর্বশেষ গত জুন মাসে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে অনিয়ম ও গোপনে তফসিল ঘোষণার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। যা প্রতিদিনের সংবাদে ২৬ জুনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি এই পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
টেন্ডার ছাড়াই ভবন নির্মাণ,অবৈধ ভবন নির্মাণ,অভিযোগ,গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়,দুর্নীতি,অনিয়ম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist