ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ,
বর্ষা এলো বলে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে নৌকার চাহিদা। ফলে বর্ষার শুরুতেই নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে উপজেলার মিস্ত্রী পাড়ায়। নৌকা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত নৌকা তৈরিতে। দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। রাতদিন একনাগাড়ে কাজ করলেও চাহিদা পূরণে হিমসিম খাচ্ছেন তারা। উপজেলার হাটগুলো জমে উঠেছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের সরগরমে জমজমাট হয়ে উঠেছে হাটগুলো।
জানা যায়, বর্ষায় নবাবগঞ্জের প্রায় ১০টি গ্রাম সম্পূর্ণ রূপে প্লাবিত হয়। উপজেলার বেঁড়িবাধ সংলগ্ন ঘোষাইল, আর-ঘোষাইল, কঠুরী, বালেঙ্গা, রাজাপুর, চারাখালী, তিতপালদিয়া ও কল্যানশ্রীসহ আশেপাশের গ্রামের মানুষের বর্ষার দিনের একমাত্র বাহন নৌকা। নবাবগঞ্জবাসীর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পাশ্ববর্তী দোহার ও মানিকগঞ্জের নৌকার চাহিদা পূরণ করেন নবাবগঞ্জের নৌকা তৈরির কারিগররা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মনখালী ছাড়াও বাগমারা, বেঁড়িবাধের বিভিন্ন স্থানে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। কাজের এতই ব্যস্ততা কথা বলার সময় নেই তাদের। এরই মাঝে কথা হয় নৌকার কারিগর ব্রাহ্মণখালীর সুভাষ সূত্রধরের সাথে। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বর্ষার সময় নৌকা বানাই। এসব নৌকা নবাবগঞ্জ ছাড়াও পাশ্ববর্তী মানিকগঞ্জের ঝিটকা বাজারে বিক্রি হয়। বড় নৌকার চেয়ে কোশা নৌকার চাহিদা বেশি। প্রতিটি নৌকা বানাতে ২২শ থেকে ২৫শ খরচ। বিক্রি করা যায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। আমাদের তৈরি নৌকা ঝিটকা হাটে বেশি বিক্রি হয়।
একই এলাকার কাঠমিস্ত্রী কানাই সূত্রধর বলেন, সারাটা বছর ঘর বাড়ি মেরামত করি। কিন্ত বর্ষার দুই তিন মাস আগেই নৌকা তৈরির কাজ করি। বর্ষায় সময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। আমরাও অতিরিক্ত কিছু আয় করতে পারি। তবে কাঠের দাম ও জোগালীদের (সহযোগী) মজুরী বেড়ে যাওয়ায় লাভ করা যায় না।
বেড়িবাঁধের মৌসুমি নৌকা তৈরির কারখানা করেছেন গৌর মৌজুমদার। তিনি জানান, ১০/১১ জন কাঠ মিস্ত্রী দ্বারা কাজ করে প্রতিদিন ৫/৬ টা নৌকা তৈরি করা যায়। একটি ছোট নৌকার জন্য ৫/৬ সেফটি কাঠ লাগে, এক সেফটি কাঠের দাম ৩০০ টাকা। সেই হিসেবে একটি নৌকায় ১৫শ থেকে ১৮শ টাকায় কাঠ লাগে। একটি নৌকা বানাতে দুইজন মিস্ত্রীর ১ দিন লাগে। তাদেরকে দিতে হয় ১ হাজার টাকা। সপ্তাহব্যাপী নৌকা তৈরি করে দোহার-নবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের সাপ্তাহিক হাটগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে যাই।
বান্দুরার কাঠ মিস্ত্রী নরেশ সূত্রধর বলেন, বর্ষায় নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খাওয়া দাওয়ার সময় থাকে না। তবে পরিশ্রম করলেও লাভ কম। সব কিছুর দাম বেশি। খরচ ও কর্মচারীদের মজুরি দেওয়ার পর লাভ বলতে কিছুই থাকে না। তবুও সান্তনা বর্ষার মৌসূমে একটু বাড়তি টাকা কামাইতে পারি।
জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের দিনমজুর বিশ্বজিৎ জানান, বর্ষার দিনে নৌকা পরিবারের চলাচলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার প্রভৃতি স্থানে যাতায়াতের জন্য নৌকার ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই আমাদের অভাবের সংসারেও বর্ষার শুরুতে নৌকা কেনা দুঃসাধ্য হলেও বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে। বর্ষার শুরুর দিকে নৌকার দাম কিছুটা কম থাকে বলেও তিনি জানান।
পিডিএসও/রিহাব