শাহ্জাহান সাজু

  ০৩ জুন, ২০১৮

কমছে করপোরেট কর

বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে করপোরেট কর হার যৌক্তিকীকরণ করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিদ্যমান করপোরেট ট্যাক্স ২৫ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় অর্থাৎ নন-পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৩ শতাংশ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন- ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে নতুন বাজেটে করপোরেট কর হার কিছুটা কমানো হবে। কারণ, বর্তমানে দেশে করপোরেট ট্যাক্সের হার খুব বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াও বিভিন্ন প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলেছেন, আসছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট কর কিছুটা কমানো হবে। এ ছাড়া শিল্পের পাশাপাশি এবারের বাজেটে আমরা কৃষিখাতকেও সমান গুরুত্ব দেব। তবে আমরা যদি ছোট ব্যবসায়ীদের

সুযোগ দিতে চাই তাহলে করপোরেট ট্যাক্সে সুবিধা দেওয়া যাবে না। সেজন্য সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বয়ের মাধ্যমে এবারের বাজেট তৈরি করতে হবে। যাতে করে দেশে শিল্পায়ন হয়।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চীনের অর্থনীতিতে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ হয়। সেখানে আমাদের জিডিপির মাত্র ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ হয়। তাই প্রাক্কলিত সময়ে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে জিডিপির অন্তত ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ হওয়া উচিত। এজন্য অবশ্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিনিয়োগনির্ভর করে—এমন বিষয়গুলোর ওপর জোর দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে করপোরেট কর হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হলো এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান করজালের আওতায় আসেনি। অন্যদিকে, যেসব প্রতিষ্ঠান করের আওতায় এসেছে, সেগুলো থেকেও সঠিকভাবে কর আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। এজন্য করের হার বেশি। তবে করের হার কমলে শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন এবং বিনিয়োগে গতি আসবে বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, চায়নাতে করপোরেট ট্যাক্সে হার ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৭ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্সের হার ৩৫ থেকে সাড়ে ৪৫ শতাংশ। হিসাব করলে দেখা যায়, সেসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করপোরেট ট্যাক্স হার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, শিল্প উদ্যোক্তাদের যদি আয়ের প্রায় অর্ধেকই সরকারকে দিয়ে দিতে হয়, তাহলে তারা বিনিয়োগ করবেন কি। করপোরেট ট্যাক্সের হার বেশি হওয়াও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন। তবে আসছে বাজেটে করপোরেট কর হার যৌক্তিকভাবে কমানো হলে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিতমাত্রায় বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী এই নেতা।

জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানে করপোরেট করের হার ২৫ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করের হার ৩৫ শতাংশ। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত) বিদ্যমান করপোরেট করের হার ৪০ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত না হলে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানির ৪৫ শতাংশ, বিড়ি-জর্দা ৪৫ শতাংশ। তাছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির বিদ্যমান কর হার ৪০ শতাংশ। তবে তালিকাভুক্ত না হলে সেক্ষেত্রে কর হার ৪৫ শতাংশ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করপোরেট কর,বাজেট,অর্থনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist