যেকোনো মেলার প্রাণ ক্রেতা-দর্শনার্থী। ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরুর পর একে একে চার দিন কেটে গেলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের খুব একটা সাড়া ছিল না। অবশেষে পরিবর্তন হয়েছে সে অবস্থার। মেলা শুরুর পর গতকাল শুক্রবার প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণা। সকাল ১০টায় গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গেই মেলায় প্রবেশ করতে থাকেন দর্শনার্থীরা। দেখতে দেখতে প্রায় ভরে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। তবে প্রথম ঘণ্টায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম।

ছুটির দিনে অফিস ও কাজের চাপ না থকায় অনেকেই পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছেন। আবার স্কুল, কোচিংয়ের বিড়ম্বনা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী দল বেঁধে এসেছেন মেলায়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে মেলার মাঠ। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শিশু ও নারীদের জন্য তৈরি পণ্য ও গৃহস্থাালি সামগ্রীর স্টলগুলোতে ভিড় বেশি। ইলেকট্রনিক পণ্য, রান্নার সামগ্রী ও পোশাকের দোকানগুলোতেও এদিন ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। তবে দেশি স্টল ও প্যাভিলিয়নের মতো জমজমাট অবস্থা দেখা যায়নি বিদেশি প্যভিলিয়নগুলোতে।

পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রামপুরার বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, বাণিজ্য মেলার শুরুর দিন থেকে বাচ্চারা এবং ওদের মা ঘুরতে আসার আবদার করছে। তাদের আবদার পূরণ করতে মেলায় এসেছি। তবে আজ কেনাকাটার খুব একটা ইচ্ছা নেই। আজ ঘুরে ঘুরে দেখাই মূল উদ্দেশ্য। মেলার শেষের দিকে কেনাকাটা করার ইচ্ছা আছে। বেসরকারি একটি কোম্পানির এ কর্মকর্তা জানান, এক ছেল ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার, স্ত্রী গৃহিনী। দুই সন্তানই স্কুলে পড়ে। পুরো সংসার চলে তার একার আয়ের ওপর। চলতি মাসের বেতন পেয়েছেন ৩ তারিখে। বেতনের টাকার একটি অংশ মেলার জন্য বরাদ্দ করে রেখেছেন।

মিরপুর থেকে ছেলেমেয়ে নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন শিক্ষিকা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ছুটির দিন থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় চলে এসেছি। ছোট বাচ্চার খেলনা ও একটি ড্রেস কিনেছি। বড় ছেলের জন্য কিনেছি একটি জিন্সের প্যান্ট। আর বাসার জন্য একটি রাইস কুকার ও কিছু প্লাস্টিকের সামগ্রী কিনেছি। এ ছাড়া কিছু বিস্কুটও কিনেছি।

মেলায় সাত বন্ধুর সঙ্গে দল বেঁধে ঘুরতে আসা ধানমন্ডির একটি কলেজের শিক্ষার্থী রোমেল বলেন, আজ ছুটির দিন। কলেজ বন্ধ, নেই কোচিংয়ের প্যারাও। তাই বন্ধুরা মিলে মেলায় ঘুরতে এসেছি। কোনো কিছু কেনার উদ্দেশ্য নেই। মেলার মাঠ ও বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখব। যতক্ষণ ভালো লাগে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিব, আনন্দ করব। মাঝে মধ্যে এটা ওটা কিনে খাব। এদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ায় বেশ খুশি বিক্রেতারাও। ব্লেজার বিক্রেতা মো. আমিনুল বলেন, একে একে মেলার চারটা দিন চলে গেলেও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন ছিল না। আজ ছুটির দিন হওয়ায় ভিড় কিছুটা বেড়েছে। তবে বিক্রি পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এরপরও দর্শনার্থীরা স্টলে এসে ঘুরে ঘুরে দেখছেন তাতেই আমরা খুশি। আমাদের প্রত্যাশা মেলার শেষার্ধে এসে বিক্রি বাড়বে।

গৃহস্থলী সামগ্রী বিক্রেতা মো. ইয়ানুর রহমান বলন, বাণিজ্য মেলায় শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ভিড় বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে। তবে মেলার মূল বিক্রি শুরু হবে আরো সপ্তাহ খানেক পর।

শিশু খেলনা ও প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, ছুটির দিন থাকায় অনেকেই পরিবারসহ মেলায় এসেছেন। যাদের সঙ্গে শিশু রয়েছে তারাই বেশি আমাদের স্টলে আসছেন। গত চারদিনের তুলনায় আজ বিক্রি মোটমুটি ভালো। আশা করি সামনে বিক্রি আরো বাড়বে। তিনি বলেন, শিশুদের খেলনা এবং প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বেশি। এরমধ্যে চুড়ি ও চুলের খোপা, নেইলপলিশ, কানের দুল বিক্রি হচ্ছে বেশি। এ ছাড়া শিশুদের খেলনার মধ্যে পিস্তল, ডেমিন কার্ড, রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টার ও রেসিং কার বেশি বিক্রি হচ্ছে।

পিডিএসও/তাজ