মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে
কিছুদিন ধরেই ডিম-মুরগি, চাল-ডাল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। অবশ্য গত দু-তিন বছর ধরেই দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নজিরবিহীন হারে বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে হিমশিম খাচ্ছে তারা। সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের বিষয় অনুভব করা যায়। দ্রব্যমূলের এ অসহনীয় বৃদ্ধি সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করলেও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা না গেলে বাজারে অস্থিরতা কমবে না।
প্রতিদিনের সংবাদে গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিছুটা কমেছে ফার্মের ডিমের দাম। বিশেষ করে গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠলেও চলতি সপ্তাহে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও পাড়া-মহল্লায় খুচরা বাজারে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে ডিম। সবজি প্রতি কেজি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কোনো কোনো সবজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকারও বেশি দামে। চলতি সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০-২৮০ টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কমেছে মরিচের সরবরাহ। এতে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বাজারে বেড়ে গেছে আদা-রসুনের দামও। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়। সুখবর নেই আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর পেঁয়াজ নতুন করে না বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। দামে পিছিয়ে নেই শাকের বাজারও। শাকভেদে প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকায়। এ ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ যথাক্রমে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, মৌসুম শেষ দিকে হওয়ায় এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে বাড়ছে শাকসবজির দাম। ব্যবসায়ীদের এমন অজুহাত নতুন নয়। ক্রেতারা বলছেন, সরকার শুধু দাম বেঁধে দিলে হবে না। নির্ধারিত দরে বিক্রি হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।
দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আর এই অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে অসহায় সাধারণ মানুষ। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। উৎপাদন বাড়লেও এদের কারসাজিতে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারে না সাধারণ মানুষ। সরবরাহ ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যসহ অনেক কৃত্রিম বাধা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা সরকার-নির্ধারিত নিয়মনীতিগুলো মানছেন না। বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। ভোক্তা পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে হাতবদলের হার কমিয়ে শক্তিশালী বিপণন কাঠামো গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
"