স্কুলমুখী হোক এদেশের প্রতিটি শিশু
শিশুদের স্কুলভীতি একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে শিশুদের এই ভীতি কাটিয়ে ওঠতে অভিভাবকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুলভীতির সমস্যার সফল সমাধানে পরিবার ও স্কুল-শিক্ষকের ইতিবাচক ও সহযোগী ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা নিয়ে হেলাফেলার কোনো সুযোগ নেই। এ নীতিতে আগে থেকে সুবিধামতো দিন ঠিক করে শিশুকে কিছু পূর্বপ্রস্তুতির পর স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্কুল চলাকালীন বা অন্য সময় স্কুলের আশপাশে যাওয়া ও পরে স্কুলের ভেতরে প্রবেশ ইত্যাদি কৌশল বের করে। এভাবে ধীরে ধীরে শিশুর স্কুল ভীতি যেমন দূর হয়, তেমনি শিশুদের ভেতর স্কুলে যাওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু সাম্প্রতিকালে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ শিশু নানা কারণে স্কুলে যেতে চায় না। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস পরিস্থিতি, কোভিড মহামারির দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের প্রাথমিক স্তরের ৫৫.২ শতাংশ শিশু ‘ভীত বা আতঙ্কগ্রস্ত’ হয়ে পড়েছে। গণসাক্ষরতা অভিযান ও ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত ‘প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ৩৬.৫ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থী পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে, ২৮.৬ শতাংশ মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং ৭.৯ শতাংশ শিশুর মেজাজ হয়েছে খিটখিটে। গণসাক্ষরতা অভিযান ও ব্র্যাক শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আয়োজিত সভায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা। জরিপ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নামা, মিছিল, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি দেখা, রাজপথে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়ার দৃশ্য দেখা বা শোনা, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কারফিউ-অবরোধ কর্মসূচির কারণে ঘরে থাকার ফলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ‘ট্রমা’ দেখা দিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনের ফলে স্কুলে না যাওয়ার প্রবণতা ও পড়ালেখার প্রতি অনীহা বেড়েছে। এ ছাড়া ভয়ভীতিতে থাকা, ঘুমের সমস্যা হওয়া ও দুঃস্বপ্ন দেখা, বিষণ্ণতা ও হতাশাগ্রস্ত হওয়া, মোবাইল ফোনে আসক্ত হওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেওয়া বা সহিংস আচরণ করা, পাঠ্যবই বা কারিকুলামে পরিবর্তন নিয়ে ভীত হওয়ার মতো প্রভাবও লক্ষ্য করা গেছে। তবে এ জরিপে সতর্কতার অনেক বিষয় রয়েছে। যা আমাদের দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। নতুবা কোমলমতি শিশুদের এই বিরূপ প্রবণতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
বলা বাহুল্য, শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছবি ও খবর দেখে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশুসুলভ চঞ্চলতা হারিয়েছে বা একাকীত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং বন্যার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার হার বেড়েছে। সেই বাস্তবতায় শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদেরকে যত সঠিকভাবে গড়ে তোলা যাবে। তারাও ততটা আলোকবর্তিকা হয়ে অন্ধকার অমানিষা দূর করে জাতিকে সঠিক পথ দেখাবে। সমস্ত বাধা বিপত্তি অতিক্রম সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"