এইচএসসির ফলাফলে উন্নতির ধারা অব্যাহত
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গত মঙ্গলবার। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফলাফলে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। পাসের হার ও জিপিএ ৫-এর দিক থেকে এ বছরও এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা। ছেলেদের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছেন তারা। ছেলেদের তুলনায় ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। যদিও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন ছেলেরা। ফল হাতে পেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। অর্থাৎ, এ বছর পাসের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। এবার জিপিএ ৫ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কিছুটা কম। তবে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। চলতি বছর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন ১ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত বছর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছিলেন ৯৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেই হিসেবে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান ৪৩৫টি বেড়েছে এবার। তবে এবার ৬৫টি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেননি। গত বছর শূন্য পাস কলেজ ছিল ৪২টি। সেই হিসাবে এবার শূন্য পাস কলেজ বেড়েছে ২৩টি।
প্রসঙ্গত, এবার পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় এরই মধ্যে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ ৫ বেড়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন। ২০২৩ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী।
একটি বিষয় লক্ষণীয়, পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বেশির ভাগ পরিবারেই এখন বইছে আনন্দের বন্যা। কিন্তু ভালো ফলও বেশ কিছু পরিবারে এনে দিয়েছে কান্না আর আহাজারি। বিশেষত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের মধ্যে যে কজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের আরেক দফা শোকের সাগরে ভাসিয়েছে এই ফল, বাড়িয়েছে আফসোস। স্বপ্ন ভাঙার বেদনায় নীল হয়েছেন সন্তান-ভাই-বোন-শিক্ষার্থী-বন্ধুহারা বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক-সহপাঠী। এই বেদনা তাদের সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে। শহীদদের পরিবার-সহপাঠী বা তাদের বন্ধুদের সান্ত¦¦না দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।
গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কিছুটা কমলেও জিপিএ ৫ বেড়েছে। তার পরও এবারের ফলাফল খুব যে সন্তোষজনক, এমনটি বলা যাবে না। কারণ স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আগামীতে পূর্ণাঙ্গভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং ফলাফলের উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকবে।
"