নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ নভেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনে প্রার্থীদের কর ফাঁকির পেছনে দৌড়াবে না এনবিআর

তদন্ত করলে দুদকেও দুর্নীতি বের হবে : মোশাররফ হোসেন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে দুদকের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করলে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থায়ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। দুদক কর-কাস্টমস বিভাগকে ‘টার্গেট করে সেখানে তাদের অফিস স্থাপনের চেষ্টা করলে তা হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। তাছাড়া নির্বাচনে প্রার্থীদের পেছনে এনবিআর দৌড়াতে চায় না বলেও জানান তিনি।

গতকাল আয়কর মেলা-২০১৮ উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন তিনি। সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের এক মামলায় দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে অবশ্য মামলা থেকে তিনি খালাস পান।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির ১৩ উৎস এবং এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৩টি সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর জমা দিয়েছে দুদক। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটা (দুদক প্রতিবেদন) এখনও পাইনি। তাছাড়া এ ব্যাপারে আমি দুদকের সাথে দ্বিমত পোষণ করি। কারণ হলো, আপনি যদি একেবারে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেন তাহলে দুদকের দুর্নীতিও কত ধরনের সেটা বের করতে পারবেন। কাজেই সকলেরই দুর্নীতি আছে আমাদের দেশে, এই সংস্কৃতিটা পরিহার করতে হবে। সেটি পরিবর্তনের জন্য আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে বলে জানান তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দুদক যা-ই বলুক, যে রিপোর্টই দিক না কেন ইনকাম ট্যাক্স আইন এবং কাস্টমস আইন অনুযায়ী যদি তাদের অ্যাক্টিভিটিজ আমাদের এখানে অ্যালাও করে তাহলেই শুধু করতে পারবেন, আদারওয়াইজ নট (নয়)। দুর্নীতি আগের চেয়ে কমেছে জানিয়েছে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে আরো সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সরকারের সৎ কর্মকর্তাদের পুরস্কার এবং অসৎ কর্মকর্তাদের তিরস্কার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। দুদকের প্রতিবেদনে আয়কর মেলা আয়াজনে বিলাস-বহুল ব্যয় হয় বলে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তার সঙ্গেও দ্বিমত রয়েছে এনবিআর চেয়ারম্যানের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা দেখেন কোনটা বিলাসবহুল। একটা একজন চিন্তা করতে পারে সেটি বিলাসবহুল, সেটি বিলাসবহুল হতে পারে; আবার আরেকজন এটাকে প্রয়োজন মনে করে বলে সেটি বিলাসবহুল নয়।

নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে ‘নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের কর নিবন্ধন বা কর বিষয়ক ক্লিয়ারেন্স লাগবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পর আমাদের তো কিছু করার নেই। তবে আইনে এটি বাধ্যতামূলক ছিল সাংবাদিকদের এমন আরেক প্রশ্নের উত্তরে মোশাররফ বলেন, নির্বাচনের পেছনে আমরা দৌড়াতে চাই না। নির্বাচনের আগে আমরা কোন দ্বন্দ্বে যেতে চাই না। তবে এবার তা করা সম্ভব না হলেও সামনে থেকে তা বাধ্যতামূলক করা হবে বলে জানান তিনি। আর নির্বাচনের কারণে রেভিনিউ কম বেশি এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও মনে করেন তিনি।

ভ্যাট ও শুল্ক খেলাপি ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,এবারের নির্বাচনটা চলে যাক, তারপর নতুন সরকারের প্রথম দিক থেকেই এ ব্যাপারে একটা উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। গত বছর চালু করা সাধারণ করদাতাদের করকার্ড দেয়া বন্ধ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্যাক্স কার্ড দিতে গিয়ে যত অর্থ ও শ্রম খরচ হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তার কোনো কিন্তু উপযোগিতা নেই। এসময় এনবিআরের এক সদস্য বলেন, ট্যাক্স কার্ড দেওয়া বন্ধ হয়নি। প্রকল্পটি অল্প সময়ের সিদ্ধান্তে মাত্র এক বছরের জন্য চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তা আবারও চালু হতে পারে। আর গতবছর শুধুমাত্র ঢাকাতেই ৯৬ হাজার করকার্ড দেয়া হয়েছিল। প্রতিটি করকার্ডে খরচ পড়েছিল ৩৯ টাকা।

করনেট বাড়াতে কাজ চলছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করনেট বৃদ্ধি করার একটা প্রচেষ্টা চলছে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা ঠিকমতো আয়কর রিটার্ন জমা দেয় কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে। বিভিন্ন বাড়িতে জরিপ চালানো হবে। সিটি জরিপের সঙ্গে এগুলো নিয়েও এগিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ২০ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ণ জমা দেন। ভবিষ্যতে তা ৩৫ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। আর এখন ই-টিআইএন ধারীর সংখ্যা ৩৫ লাখ। কয়েক বছরের মধ্যে তা ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে এনবিআরের।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। নতুন কিছু অফিস জেলা-উপজেলা পর্যায়েও করবো। বর্তমানে কর অঞ্চল ও সার্কেল বেড়েছে। জনবল বাড়লে রাজস্ব আদায় আবারও লাফ দিয়ে উপরের দিকে উঠবে।

ওই সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে এনবিআর ভবনের সামনে থেকে দুটি পিকআপ ভ্যানের শোভাযাত্রা শুরু হয়। ফিতা কেটে তা উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে এবারের আয়কর মেলা হবে অফিসার্স ক্লাবে। থাকবে আগের মতোই সব সুবিধা। তবে এবার চমক হিসেবে থাকছে ভিজ্যুয়াল পদ্ধতিতে কর প্রশিক্ষণ।

কেন্দ্রীয়ভাবে ১৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী এ মেলা চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত। সারাদেশেই থাকবে এ মেলার আয়োজন। ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে ৭ দিন, জেলা শহরগুলোতে ৪ দিন, ৩২ উপজেলায় ২ দিন, ৭০ উপজেলায় একদিন ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। থাকবে ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন ও রঙিন সাজসজ্জাও। ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

খুলনা ব্যুরোঃ খুলনায় আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা-২০১৮ শুরু হচ্ছে। ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত নগরীর বয়রা কর ভবন প্রাঙ্গণে চলবে এ মেলা। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মেলা চলবে। গতকাল রোববার দুপুরে কর অঞ্চল-খুলনার কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে কর কমিশনার বলেন, সকল শ্রেণির করদাতার সহজে ও স্বাচ্ছন্দে আয়কর রিটার্ন দাখিল করাসহ সকল সেবা সুষ্ঠুভাবে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইটিআইএন রেজিস্ট্রেশন বুথে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে নতুন করদাতারা ইটিআইএন রেজিস্ট্রেশন এবং বর্তমান করদাতারা রি-রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। পাশাপাশি মেলায় করদাতারা তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল এবং মেলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত সোনালী, বেসিক ও জনতা ব্যাংকের বুথের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আয়কর জমা দিতে পারবেন। মেলায় মহিলা, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য পৃথক বুথ থাকবে। করদাতাদের রিটার্ন পূরণে সহায়তা করার জন্য মেলায় ‘হেলপ ডেস্ক’ থাকবে। এ বছর আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। সম্মেলনে আরো জানানো হয়, আজ সোমবার নগরীর একটি হোটেলে আয়োজন করা হয়েছে করদাতা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। কর অঞ্চল খুলনার আওতাধীন খুলনা সিটি কর্পোরেশনসহ ১০টি জেলা হতে মোট ৭৭ জন সেরা করদতাকে বিভিন্ন ক্যাটাগারিতে সম্মাননা প্রদান করা হবে।

উল্লেখ্য, এবছর কর অঞ্চল খুলনার আওতাধীন খুলনাসহ ১০ জেলার জেলা শহর যথাক্রমে- যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় ১৪-১৭ নভেম্বর, চুয়াডাঙ্গা, ১৬-১৯ নভেম্বর, নড়াইল এবং মাগুরা ১৫-১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চার দিনব্যাপী আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও যশোরের ঝিকরগাছা ও অভয়নগর উপজেলায় ১৭-১৮ নভেম্বর এবং বাগেরহাটের মোংলা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৮-১৯ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এসকল মেলা প্রতিদিন সকাল নয়টা হতে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close