reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ মার্চ, ২০২৪

বই আলোচনা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ছোটগল্পে জীবনবাস্তবতা

সালাহ উদ্দিন মাহমুদের গল্পগ্রন্থ ‘এখানে কয়েকটি জীবন’। ২০২২-এর বইমেলায় এটি প্রকাশ করে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। বইটিতে ১১টি গল্প রয়েছে- জীবন, সোনাবউ, শাড়ি, বিবস্ত্র, দায়ী, জয়শ্রী, কুমারী, নাকফুল, কুকুর, গোলেয়া ও মিঠু।

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ ‘জীবন’ গল্পে রিজিয়া-আনিস দম্পতির সংসারে সন্তান না আসার যন্ত্রণা তীব্রভাবে উপস্থাপন করেছেন। মানুষ দাম্পত্য সম্পর্কে জড়ালে তখন প্রত্যেক দম্পতিই বাবা-মা হওয়ার স্বাদ নিতে চান। মানুষের যাপিত জীবনের পরিপূর্ণতা পায় সন্তানের সাহচর্যে! ঢাকা শহরের ব্যস্ত নগরীতে সবাই তার কর্মে ব্যস্ত। কারো উপার্জন বেশি, কারো কম। হয়তো সে আশায় বুক বেঁধে ছিল দম্পতি, বেতন বৃদ্ধি পেলে সন্তান পৃথিবীতে শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে পারবে। সন্তান আগমনের আগেই সচেতন দম্পতি তাদের সন্তানের মঙ্গল কামনা করছেন! হয়তো এই অপেক্ষা একসময় জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। তিন বছর অপেক্ষা করার পর মনে করে এখন সঠিক সময়। রিজিয়া-আনিসের সংসারে একটা সন্তানের প্রত্যাশা করে! ঠিক তখনই নেমে আসে তাদের জীবনে অন্ধকার। ডাক্তার-কবিরাজ কোনো কিছুই বাদ যায়নি। বাবা ডাক শুনতে না পারার যন্ত্রণা আনিসকে কুরে কুরে খায়, মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ না করায় বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায় রিজিয়ার সংসার! দুজন দুভাবে কষ্ট পায়। তবু কেউ কারো সঙ্গ ছাড়ে না। কেউ কাউকে দোষারোপ করে না। এভাবে কেটে গেল সাতটি বছর। বড় ফ্ল্যাট হলো, গাড়ি হলো, বেতন বাড়ল। সচ্ছলতা ফিরে এলো। শুধু ‘সন্তান’ নামের সুখ শব্দটা তাদের পরিবারে এলো না। রাস্তায় যাওয়ার সময় হঠাৎ গাড়ি থেকে আনিসের চোখে খুঁটিতে সাটানো এক দরিদ্র নারীর আকুল আবেদন চোখে পড়ল- ‘আমার নাম ছুমাইয়া। আমার পেটে একটা বাবু আছে। অভাবের কারণে এই বাবু বিক্রি করে ফেলব। যদি কেউ এই বাবুকে নিতে চান ফোন নম্বরসহ দেওয়া আছে।’

ঠিক তখন আনিস ভাবতে লাগল- পৃথিবীতে এমনো মা আছেন, যার সন্তানকে বিক্রি করে দিতে চান। অর্থের অভাবে। বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়, মেনে নিতে পারছিল না মনে মনে। বাস্তব জীবনে মানুষ দরিদ্র হলে কতটা অসহায়ত্বকে বরণ করে নিতে হয়, তা জীবন গল্পে উপলব্ধিজাত। আনিস-রিজিয়া তখন বুঝতে পারে ছুমাইয়াকে সাহায্য করা উচিত। আনিস রিজিয়া সময়ের অনাগত সন্তানকে পৃথিবী দেখানোর জন্য আর্থিক সাহায্য করে। একটা ছেলেসন্তানের জন্ম দেয় ছুমাইয়া। কথা হয় অসহায় ছুমাইয়ার বাচ্চাটা তারা দত্তক নেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিজিয়া পারেনি। পারল না একটা মায়ের বুকশূন্য করে নিজে মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করতে! ছুমাইয়ার ভাষায়, ‘কন কি আপা? আমি কতগুলো টাকা নিলাম। চার মাস ধরে ভালো-মন্দ খাওয়াইলেন। ডাক্তার দেখাইলেন। হাসপাতালের খরচ দিলেন। বাকি ২০ হাজার টাকা নেওয়ার সময় দেবেন কইলেন।’ প্রতি উত্তরে আনিস বলেন, ‘আমার বুক ভরিয়ে তোলার জন্য আরেক মায়ের বুক খালি করব? তার চেয়ে আমার বুক শূন্যই থাক।’ রিজিয়ার কথা শুনে ছুমাইয়া-বারেক কেঁদে ফেলেন। বারেকের হাতের মুঠোয় মুচড়ে যায় খামটি। আনিস রিজিয়ার চোখেও জল, তবে ঠোঁটের কোণে হাসি। এ হাসি এক অসহায় দরিদ্র দম্পতির জীবনপথকে সহজ করে তোলার হাসি!

সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ‘বিবস্ত্র’ গল্পে অসহায় রুবির ধর্ষণের বিচার না পাওয়ার এক করুণ দৃশ্য পাঠক হৃদয়ে দাগ কাটবে। সুজন আর রুবির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রুবিকে কে যেন ধর্ষণ করে বিবস্ত্র অবস্থায় রেখে যায়। গল্প কথকের ভাষায়, ‘আজ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে অজ্ঞাতনামা একটি মেয়ের বিবস্ত্র মৃতদেহ পাওয়া গেছে। মেয়েটির পরিচয় জানার চেষ্টা করছে শাহবাগ থানার পুলিশ।’

প্রেমিক সুজন নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। রুবির চেহারা দেখে ঠিকই চিনতে পারল। ‘নিজের অজান্তেই চিৎকার করে বলে ওঠে, ওরে আমি চিনি। ওর নাম রুবি। অয়তো কোনো অপরাধ করে নাই। ওরে মারছে কেডা? ওরে মারছে কেডা? বলতে বলতে শহীদ মিনারের দিকে ছুটতে থাকে। সুজন জানে না, ততক্ষণে রুবির মৃতদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। থানার সামনে থেকেই লাইভ করছে টিভি সাংবাদিক।

ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সব সময় সমাজে বিরাজমান। কে বা কারা রুবিকে ধর্ষণ করে বিবস্ত্র অবস্থায় রেখে গেল কেউ জানে না। সঠিক বিচার একমাত্র তারাই পায়, যাদের হাতে ক্ষমতা। কিন্তু সুজনের কথা শোনার মতো কারো সময় ছিল না। পুলিশ ও সাংবাদিক তাকে কোনো পাত্তা দেয়নি। অসহায়ত্ব আর দরিদ্রতা হয়তো ক্ষমতার হাতে জিম্মি। তাই বিবস্ত্র গল্পে অজস্র ধর্ষিতা রুবির জীবনের গল্প ও রোমহর্ষক হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাপা পড়ে যায়।

* রত্না মাহমুদা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close