আলমগীর খোরশেদ

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গ্রামীণ ঐতিহ্য

ধানের গোলাঘর

গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছের কথা আবহমান গ্রামবাংলার সবাই জানে। গ্রামে যার বেশি জমি থাকে, সে-ই সমাদৃত, গণ্যমান্য ব্যক্তি। গৃহস্থ তার বাড়িতে ফলানো ধান, বিভিন্ন কলাই, ডাল, গম, কাউন রাখার জন্য বাঁশের তৈরি ডুলি ব্যবহার করতেন। গৃহস্থ বাড়িতে ধান রাখার জন্য প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হতো ধানের গোলা। বিয়ের প্রস্তাব এলে মেয়ে বা ছেলের বাবার ধানের গোলাঘর আছে কি না, থাকলে তা কত বড়, তা খতিয়ে দেখা হতো। গোলাঘর থাকাকে গৃহস্থ বাড়ির ঐতিহ্য মনে করা হতো। গোলাঘরে বাঁশ বা কাঠের খুঁটি গেড়ে তার ওপর বাঁশ চেছে তা বিছিয়ে মাচা বা আঞ্চলিক ভাষায় ‘উগার’ বানানো হতো। উগারের ওপর রাখা হতো ধান রাখার ঢোল বা আঞ্চলিক ভাষায় বলে ‘ডুলি’। ডুলি বাঁশের বেতা দিয়ে চাটাইয়ের মতো বানিয়ে ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের করে বানানো হতো। ধান রাখার সবচেয়ে পুরোনো অনুষঙ্গ হলো ডুলি। ধান হিসেবের সময় ডুলি গুনতো আগে। কত মন ধান কোন ডুলিতে ধরে, তা জেনে সহজেই ধানের হিসাব বেরিয়ে আসতো। আমন ও বোরো মৌসুমে ডোল বা ডুলি বেশি তৈরি হয়। আগের দিনে চোর-ডাকাতের ভয়ে গৃহস্থরা তাদের স্বর্ণালংকার ডুলির ভেতর রেখে দিতেন। দিনে দিনে ফসলি জমি, ধানি জমি কমে যাওয়ায় গোলাঘর আর চোখে পড়ে না। কৃষকও আগের মতো ফসল ফলান না। কলের লাঙল এসে গরু দিয়ে হালচাষ এখন উঠেই গেছে বলা যায়। মাচা বা উগারে চাল, কলাই, গম, রাখার জন্য মটকা বা মটকি থাকত। প্রতি বছর ধান মাড়াই শুরু হলেই গৃহস্থ ধান রাখার মাচা বা উগার ও ডুলি মেরামতি কাজ সেরে নিতেন। ডুলির নিচের অংশ যেখানে জোড়া থাকে, সেই জায়গাটা গোবর ও মাটিতে প্রলেপ দেওয়ার রীতি ছিল। ইঁদুরের যন্ত্রণায় ধানের ডুলিগুলো ছিদ্র করে দিত বলে ডুলিতে মেরামত কাজ লেগেই থাকত। গোলাঘরে মুরগি-হাঁস পালন করতেন গৃহস্থ। ডুলিতে ধান থাকত পরিপূর্ণ, তাতে মুরগি ধানের ওপর বসে ডিম পারত। আর উগার বা মাচার নিচে থাকা হাঁসও ডিম পারত। যার ফলে বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা লুকিয়ে গোলাঘরে ঢুকে ডিম নিয়ে আসত। যা আগুনে পুড়িয়ে খাওয়ায় মজা হতো খুব। এখন আর ধানের গোলা পাওয়া যায় না। বিদেশে সন্তান পাঠিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেলে চলাফেরা করে গ্রামের মানুষ। হালের বলদ, দুধেল গাই, ধানের ডুলি বা গোলাঘর হারিয়ে গেছে কালের গর্বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close