বিপ্লব বিশ্বাস

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

পাকচক্রে

আমাদের পাকদির গোঁফ না থাকলে কী হবে, পুরনো ঘি-বাস লেগে আছে ওষ্ঠাধরে। আর তার চোটেই ম-ম করে সকালের পাকশাল। উত্তর-আধুনিকরা যাকে ডাকে মডিউলার কিচেন নামে। সেখানে সংগতকারিনী মালকিনের সঙ্গে হাজারো বয়ান, হাজারো ঠেকা। অঝোর ধারার বকবকানি। ঝাল-লবঙ্গ-ইচ্ছে নদী-দিদি-মোদি সব্বাই হাজির যে যার মতো। এর মধ্যেই কোনোটায় ঝাল বেশি, কোনোটায় আবার লবণ কম। মালকিনের তেহাই ছাড়িয়ে এন্তার ঠেকা থাকলেও পাকদির ঠেকে শেখা নেই, আছে শুধু মুখফস্কানো ‘ওই যাহ’, ‘যাহ বাব্বা’ ইত্যাকার বোলবুলি। অথচ মুখে জগৎ পেড়ে ফেলে সে সকল পদ রান্নার মাউই। ওই যে কী বলে নাÑ সবজান্তা গামছাওয়ালা... না, এখানে ওয়ালি।

এহেন পাকদি পিঠোপিঠি দুই বাচ্চার মা পম্পাকে এনে আছড়ে ফেলল মালকিন শোভার ড্রয়িংয়ে। হাজার স্কোয়ার ফিটের ঝাড়পোঁছসহ সপ্তাহে দুদিন কাচাকুচি টুকটাক। দুই থেকে নেমে রফা হলো দেড় হাজারে। সঙ্গে চা-টা হিসেবে না থাকলেও, আমি জানি, শোভা তা না দিয়ে পারবে না। আগের মহিলার মাজা নিচু হতো না, ছিল সাড়ে বারোশোয়। তাকে আবার গরমে গরম-ঠা-া আর শীতে ঠাণ্ডা-গরম জল ককটেল বানিয়ে খাওয়াতে হতো। এদিকে পাথরমেঝের পরতে পরতে ঝুলধুলের নতুন নকশা গড়ে উঠছিল দিনকেদিন। অস্থির শোভা খুঁজছিল ইতিউতি। এভাবেই পাকদির জুটিয়ে দেওয়া পম্পা। ঝটিতি কাজে তুখোড় মেয়ে কদিনেই ঘরদোরের শোভায় স্ট্যাটাস কো এনে দিল। শোভাও খুশিতে ডগমগ হয়ে রুটি-তরকারির সঙ্গে এক-দুটো মিষ্টিও জোগাতে থাকল পম্পাথালে। মাঝেমধ্যে ঘরের সবাইকে যেমন তার উথলানো খুশির ছোঁয়া দিতে থাকল, তেমনি পাকশালের কথাচারিতায় পাকদিকেও শোনাতে থাকল পম্পাশংসা। অথচ মেয়েটিকে এনে ফেলার কালে যত না পাঁচমুখ করে ওকে তোল্লা দিয়েছিল, এখন যেন ততটাই ব্যাকফুটে খেলতে চাইছে পাকদি।

এর কারণ বুঝতে হলে পাঠককে একবার প্রথম বাক্যে ফিরতে হবে। জানতে হবে পাকদির পাকপাড়া। ভিআইপিসংলগ্ন এই এলাকা তখন তো গাঁ-ই বলা চলে। পুকুরটুকুর, আগানবাগান নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা। আস্তে আস্তে বিমানবন্দরই এম বাইপাস-রাজারহাট-নিউটাউন-ইকো পার্ক-নিক্কো পার্কজুড়ে উন্নয়ন-হি-উন্নয়ন। জমিজিরেতের দাম বাড়তে থাকে তরতরিয়ে। চমক লাগা জনমানুষের জিভনির্গত লালঝোলে লোভপসরার খুড়োর কল। শরিক-শরিকানদের মধ্যে বিভেদের বেড়া পড়ে যায়। কে কতটুকু ঝেঁপে নিতে পারে তারই যুদ্ধ লেগে যায় এ-বাড়ি ও-বাড়ি। পাকদির বর এক আলসের ডিম। দাদা-ভায়েদের মধ্যে পড়ে সে হয় চিঁড়েচ্যাপ্টা। অথচ ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’ তত্ত্ব মেনে সৃজনকামে পোক্ত লোকটি বানিয়ে ফেলেছে পরপরÑ তিন কন্যা। এখানেও হয়তো ‘দেখাই যাক না’ আশাতত্ত্ব কাজ করেছে। লিঙ্গদার জোটেনি কপালে। যাই হোক, মেরেকেটে ভাগকপালে যেটুকু জুটেছিল তা দিয়ে মেয়ে তিনটেকে গছিয়ে দিয়েছে এ-ঘাড়ে ও-ঘাড়ে। তারা সব আছে যে যার মতো। এদিকে কুঁড়ে বর নিয়ে পাকদির চলে কীভাবে? কিছুদিন একটা চপঢপ দিয়েছিল কইখালি মোড়ে। তোলা মাটিতে জমকাচ্ছিল ভালোই। দিদি ভাজে, দাদা বেচে। কিন্তু আলসেদের আবার পেটফাঁদল বড় হয়। তাই বেচতে বেচতে খাওয়া আর খেতে খেতে বেচা। দোকানচিত্তিরের রং চটতে সময় নিল না। আবার পোড়া তেল লিভারে জমে জমে দাদার বিতিকিচ্ছিরি আকার নিল। পাকদি তাই ও পাট চুকিয়ে পাককাজে হাত পাকাতে নিল। বড়বাড়ির বউ তো আর এর ওর এঁটোকাঁটা করতে পারবে না! আবার ফ্যালসানি ঘেঁটে যে নার্সিংহোমে আয়াকাজ করবে তাও নয়। তাই এই ভদ্রব্যবস্থা। দু বাড়ি করে। তার সঙ্গে এলাকার ন্যাতা-নেত্তিকে ধরে জুটিয়ে নিয়েছে গ্যাঁড়াপোতা হাইস্কুলের দুপুরখ্যাটনের পাককাজ। সেখানে স্বয়ম্ভর গ্রুপের তিনজনের ওই হেড। ত্র্যহস্পর্শে চলে রোজকার সোয়াবড়ি-ডাল-ঘ্যাঁট, ঘ্যাঁট-ডাল-সোয়াবড়ি। মধ্যেমাঝে অবশ্য ডিম ঢুকে পড়ে। সেখান থেকেও হেডবাবুর আস্কারায় কিছু গেঁড়িয়ে ঘরে আসে। ছুটিছাটাও পায়। স্যারেদেরও নানা ফাতানাতায় পাক করে খাওয়াতে হয়। মুখবদলের খানা। সেখানেও পাকদির পাক নাকি তোফা! স্যারেরা চেটেপুটে মেরে দেয়। আবার মাইনে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টÑ এসব ঝক্কির গল্পও আছে। সবই শোভাকে শুনতে হয় সকালপাকের কালে। পাকদিকে তখন দিদিমণি দিদিমণি মনে হয়।

তা এহেন মানুষের টুকুন ঘ্যামঘ্যামানি তো থাকবেই। পুরনো রমরমাবাস তো লেপ্টে থাকবেই দেহমনে। তার ওপর সে ওয়ার্কিং লেডি। ঘরের কামকাজ, চা-টা, কুটনো-টুটনো বরকে চাপিয়ে দিয়েছে। ভাবখানা এমন, বাইরের কাজ পারবি না তো, ঘরেই খাট। এখানেও পুরুষতান্ত্রিকতাকে পিষে দাপুটে নারীবাদ। তাই তাদেরই শরিকঘরের এক কোণে পড়ে থাকা বরখ্যাদানো পম্পার গুণগানে শোভা পাঁচমুখ হলে রাশ টানতে চায় পাকদি। পাকে পাকে কথা জমিয়ে একদিন খামোখা বলে বসে, ওর কথা বেশি বোলো না বউদি। কেন? মুখময় অবাকচাদর ঝুলিয়ে শোভা জানতে চায়। না, মানে, ও মেয়ে কিন্তুক সুবিদের নয়। হাতটান আচে। এট্টু চোকে চোকে রেখো। তুমি আগে বলোনি তো? এখন বলছ। আগে জানলে...

না, তা নয়। এর আগে কোন মাউড়ে বাড়ি থেকে নাকি এক রাজস্তানি জরিচাদর...তাপ্পর তো কী খিটকেল...ওর কাজটাই চলে গেছিল।

বুঝলাম, তা এখন বলছ কেন এসব?

আম্মুও তো জানতাম না। ওরা তো আগে ওপ্পারে ছিল। লোকনাথ মন্দিরের দিকে...

শোভা খানিক দম নিয়ে বলে, আমি বাপু ওর পেছপেছ চক্কর দিতে পারব না। ও আমার অভ্যেস নেই।

ততক্ষণে মুলোশাকে পোড়া গন্ধ বেরিয়ে পড়েছে। আবার রে রে। আবার ‘ওই যাঃ।’

সন্ধ্যাছ্যাঁকে শোভা ভাবনা প্রকট করে, জানো তো, দিদি বলছিল, পম্পার নাকি হাতটান আছে। বড্ড চিন্তায় পড়লাম তো! তুমি কিন্তু পার্স পকেটে রেখ না। আলমারিতে রাখবে।

আরে ধুর, করছে তো বেশ কিছুদিন। তেমন তো মনে হয় না। তবে বলছ যখন...। আমি না হয় রাখলাম, কিন্তু তোমার ছেলে? ও তো যেখান সেখান রেখে দেয়। তা ছাড়া, এভাবে কটা জিনিস সামলাবে? তাও যট্টুকু হয়। সেবারে দেখনি? রেবা কী করল? অত বিশ্বাস করলাম। কত্তো কী দিতাম-টিতাম। তাও তো আমার কানেরটা...!

ওই যে নিয়েছে, তার প্রমাণ পেয়েছিলে?

তা অবশ্য পাইনি। তবু অভাবী মনে লোভের গাছ তো গজায়। তবে এ কথা ঠিক, পম্পার কাজকাম খুব সুন্দর। এ কদিনে শুধু ঘরদোরের চেহারাই পালটে দেয়নি, বাসন-কোসনও ঝকঝকে করে তুলেছে।

আর আমার জামাপ্যান্ট? লালচে ধরে গেছিল। এখন তো ধপধপে। কলারের ময়লা দাগটা অব্দি পালিয়ে বেঁচেছে।

এভাবে চলছিল। হঠাৎ এক সকালে পাকদি জানতে চায়, কাল বিকেলে পম্পা এসিছিল?

না তো, শোভা বলেই তাকায়।

কী করে আসবে? মাঝেসাঝে চরতে যায় যে।

এয়ারপোটের দিকে।

আবার নতুন বিষয় বুঝে চুপ যায় শোভা।

বিকেলে পম্পা এসে বাড়–ন হাতে নিতেই শোভার প্রশ্ন, কাল বিকেলে আসিসনি কেন?

আর বলেন ক্যানো কাকিমা। বড় মেয়েটা সারাদিন জল ঘেঁটে ঘেঁটে জ্বর বাদিইছে। তাই হলদিরামের উখানে নিয়ি গেছিলাম। বিনয় ডাক্তারের কাছে। হপ্তায় একদিন বিনি পয়সায় দেখে। ওষুদ-টষুদও দিয়ি দেয়। তাই আসতে

পারিনি।

শোভা আর ভাঙে না। কারটা যে মানে! তবু ভাবে, হলদিরাম তো এয়ারপোর্টেরই আগে।

আবার এক সাঁঝবেলায়। টিভিতে রচনার দিদি নং-১। আর পাকদির বঁটির ডগায় পরদিনের সবজি। ছোট-মাঝারি-বড় কুটনোর আকার বোঝাচ্ছে শোভা আর পাকদি কাটছে। মুখে খই নানাবিধ। হঠাৎই বলে বসে,না, ওকে আর রাখা যাবে না। জ্বালাতন বাড়ছে।

ও কি পম্পার কথা বলছে! কোথায় রাখা যাবে না বলছে! এহেন ভাবনাসাঁড়াশি বুকে চেপে বসলেও শোভা আলগোছে জানতে চায়, কাকে রাখা যাবে না?

কাকে আবার? ওই ছুঁড়িকে। আলুতে বেহিসেবি ফালা দিতে দিতে মুখ বিছড়োয় পাকদি। শোভা একটু আরামশ্বাস নেয়। তাহলে পম্পা নয়,অন্য কেউ। তবু:

কোন্ ছুঁড়ি?

পম্পা গো, পম্পা।

কেন? আবার কী হলো?

আর বলবেন না বউদি। ওর বড়টা তো পাড়ার প্রায়মরাতে যায়। থিরিতে পড়ে। আর ছোট্টাকে দড়ি দিয়ি জানলাশিকে বেইন্দে রেখে ও কাজে যায়।

তো?

তো কাল হয়িচে কি, ছেলেটা হেগেমুতে বানাবান। কে ছাপ করে! শেষতক আমার বরকেই করতে হলো। দাদা দাদা করে তো...

তা, দাদাকে করতে হলো কেন?

ওই যে কতায় বলে না, দোরের গু ফেলবি তো ফ্যাল,নাইলে...। আমার পাকঘরের সামনেই থাকে যে।

তা হয়েছেটা কী? শিশু তো।

সে ঠিকাছে। কিন্তু এমন যে আবারও হবে না তার কি গ্র্যান্টি আচে, বউদি? ওতো ছেলেকে হাগিয়ি-মুতিয়ি যাবার সুমায়ই পায় না।

এ সমস্যা ঘোরতর ভেবে চুপ মেরে যায় শোভা। ভাবে, পম্পা এই কাছবাড়ি থেকে দূরে কোথাও ঘর নিলে আবার ঠিকমতো আসতে পারবে তো!

এরপর থেকে শোভা লক্ষ করে, পাকদির মধ্যে একটা সামন্তভাব ফুটে উঠছে। সকালরান্নার বাসনপত্র আগে নিজেই মেজে নিত। দিনকয় হলো, সবই গামলিতে নামিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে শোভা একদিন বলতে গেলে পাকদি সটান বলে, ও কিছু বলবে না, মেজে নেবে। বাচ্চা মেয়ে, অসুবিদে কী? না, ওরও তো ডাঁই বাসন থাকে। রাতের খাওয়া, সকালের খাওয়া। তার ওপর যদি...

শোভা বলে বটে, তবে কথায় তাকত কম। পাকদির মুখ-মেজাজ খুব। আবার ছেড়ে যাবারও ভয় দেখায় মধ্যেমাঝে। কোথায় কোন্ মেস-এ নাকি বলছে। কাজ কম, দরমা বেশি।

শোভা, শোভাদের এ এক উভয় সংকট। যে কোনো দিনই পশ্চিমের আঁচ লেগে যেতে পারে। তখন হয় নিজের কাজ নিজে করো,নয় মরো। কাজমেয়ে আর মিলবে না এরপর!

যাই হোক, এভাবেই চলছিল। একে সামলে, ওকে তোল্লা দিয়ে কেটে যাচ্ছিল গুজরানো দিন। এরমধ্যেই একদিন পম্পার বাসনমোছা ন্যাকড়ায় রান্নাশেষে তেলহলুদ মাখিয়ে রেখে গেল পাকদি। নিজের আলাদা খানচারেক থাকতেও ওর এই হাতগলানো। শোভা বারণও। শোনেনি। কেননা সে পম্পাকে কাজ জুটিয়ে দেওয়া প্রভু। ঠারেঠোরে যা বোঝাতে চায় সে। সঙ্গে পম্পাবিষয়ে হাজারো পাকপাড়া চুটকি যা ভয়গোটা চারিয়ে দেয় শোভার মনগোঁড়ায়। এইবার পম্পা এসে মাজাবাসন মুছতে গিয়ে চরম বিরক্ত। শোভা যে পাকদিকে নিষেধ করেছিল তা শুনিয়ে নিজে নিরাপদ অবস্থান নিল। পরিষ্কার পম্পা মাজাবাসনে তেলহলুদ লাগবে ভয়ে ভিমবার দিয়ে ভীমশক্তিতে রগড়ে ন্যাকড়াকানি সাদা করে। মুখে তেমন কিছু না বললেও সেখানে ছড়িয়ে থাকে বিরক্তিদানা। শুধু বলে,উনার তো আলাদা ন্যাকড়া আছে, তালে আমারটা নিয়ে নুংরা করার মানে হয়? খুবই সঙ্গত ও শ্লীল প্রশ্ন। কিন্তু বিকেলে এসে যেই না পাকদি এ কথা কানে নিল, অমনি তেলেবেগুনে:

পম্পা এ কতা বলেচে বউদি? ছুঁড়ির আস্পদ্দা তো কম না! দাঁড়া তোর ব্যবস্থা করচি। এরপর প্রায় মিনিট পনেরো গজরগজর। খাঁচার বাঘকে খোঁচালে যা হয় আর কি। শোভাও চরম বিরক্ত হয়। ভাবে, পাকদি যেমন খিসখিসানি জুড়েছে তাতে করে পম্পাকে রাখাই দায় হবে দেখছি!

এরপরই সেই মোক্ষম ঘটনা। কদিন আগে কৃষ্ণনগর গিয়েছিল শোভা। এক বিয়ে সারতে। আমারও যাবার ছিল। কিন্তু চলৎশক্তিহীন মাকে রেখে দুজনে একসঙ্গে যেতে পারি না কোথাও। আর ছেলের তো সাতটা-নটা। ছুটোছুটি বেশি, ছুটি কম। তাই...।

অঘ্রাণের শেষ। ঠান্ডা আছে। কর্কটক্রান্তি রেখা দেহফুঁড়ে যাবার ফলে কৃষ্ণনগরে একটু বেশিই। আবার বিয়েবাড়ি। তাই দামি কাজ করা শালটিই নিয়ে গিয়েছিল শোভা। ফিরে এসে ইজিকাচন দিয়ে আলনায় ভাঁজিয়ে রেখেছিল। তারপর হঠাৎই একদিনের জন্য দমদমের দিদিকে দেখতে গিয়েছিল। পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছে। ফিরে এসেই শালের খোঁজ। জায়গামতো রাখবে। আলনা থেকে আলমারি, ট্রলি থেকে ওয়ারড্রোব। আতালিপাতালি খুঁজেও দেখা মিলল না প্রিয় শালটির। সে কি তবে শাল দিয়ে চলে গেল! স্মৃতি দূরতর হয়, খোঁজাখুঁজি তন্নতন্ন। নানা কাজকামের ফাঁকে। হঠাৎই চমক লাগে শোভার মনে। বীজ তো আগেই পুঁতেছে পাকদি। দিনে দিনে রস নিয়েছে সংশয়গাছ। তাহলে কী...!

এ কথা আমাকেও বলে শোভা। ওর সন্দেহ পোক্ত হয় যখন সব খোঁজা শেষ মনে হয়। আমি বলি, অত বড় একটা জিনিস... নেবে কীভাবে?

ও তুমি বুঝবে না। দামি শাল তো, অনেকটা মসলিনের মতো। শাড়ির ভাঁজে ঢুকিয়েই...

তবু আমার মন সায় দেয় না। অযথা একজনকে...! মনে পড়ে বছর দশেক আগের কথা। তখন কণাদি কাজ করত। কোনোদিন কণাবস্তুও চুরি যায়নি। তবু সন্দেহ করেছিলাম, আমার ঘড়িটা না পাওয়ায়। এ এক একপেশে নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানসিকতা। ধরবি তো ধর, বেঁড়ে শালাকে ধর। পরে জানা গেল, আমার খুড়তুতো ভাই বিমান ওটা পরে দুবাইয়ের বিমান ধরেছিল। ওর এই এক স্বভাব। না বলে কয়ে...।

তাই শোভা নিশ্চিত হতে চাইলেও আমি এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাই না। শুধু শোভাকে বলি, তোমার সব খোঁজা শেষ? এ কথায় কেন জানি না, শোভা ঝট করে উঠে পড়ে। কী একটা মনে পড়ে ওর। মিনিটদশ পর শালটি হাতে করে এ ঘরে এসে বলে, পুরনো একটি ব্যাগে রেখেছিলাম দেখছি; সেটিই অবহেলায় দেখা হয়নি।

আমি দেখি, শোভার প্রিয় বস্তুটি নিজেকে কুঁকড়ে এমন আকার নিয়েছে, তা আর ওর দেহজুড়ে

মেলে বসবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close