বিজ্ঞান ডেস্ক

  ১৪ মে, ২০১৭

সমুদ্রের পানি থেকে লবণ আলাদা করার ছাঁকনি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানী এমন একটি ছাঁকনি তৈরি করেছেন, যা দিয়ে সমুদ্রের পানি থেকে লবণ আলাদা করে ফেলা সম্ভব। গ্রাফিন দিয়ে তৈরি এই ছাঁকনি ব্যবহার করে সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে মিষ্টি পানিতে পরিণত করা যাবে। বলা হচ্ছে, বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কারণ এই ছাঁকনিটি সারাবিশ্বে কোটি কোটি মানুষের পরিষ্কার খাবার পানির সঙ্কট দূর করতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।

ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে সত্তর কোটির মতো মানুষের কাছে পান করার মতো নেই নিরাপদ পানি। জাতিসংঘ বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১২০ কোটিরও বেশি। এই গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞানী রাহুল নায়ার বলেছেন, সারা বিশ্বে যে কোটি কোটি মানুষের কাছে খাবার পানি নেই, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে তাদের সামনে সেই সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করতে পারি যে, আর কয়েক বছরের মধ্যেই এটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।’

ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই ছাঁকনিটি আবিষ্কার করেছেন। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. রাহুল নায়ার। তিনি দেখিয়েছেন, অন্য একটি রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি গ্রাফিন অক্সাইড ব্যবহার করে তারা সমুদ্রের পানি থেকে লবণকে আলাদা করতে সফল হয়েছেন।

বিবিসির বিজ্ঞানবিষয়ক সংবাদদাতা পল্লব ঘোষ বলেছেন, এটি আর সব ছাঁকনির মতোই। গ্রাফিনের তৈরি এই ছাঁকনিটিতে আছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিদ্র যা দিয়ে পানি বেরিয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার গায়ে লবণ আটকে থাকে। বিজ্ঞানীদের এই দলটিই ২০০৪ সালে প্রথম গ্রাফিনকে আলাদা করতে সক্ষম হয়। এই গ্রাফিনে আছে কার্বন এটমের একটি স্তর এবং এগুলো সাজানো আছে ষড়ভুজের আকৃতিতে। এর আছে অস্বাভাবিক কিছু বৈশিষ্ট্য। যেমন প্রসারিত করা যায় এ রকম শক্তি এবং এটি বিদ্যুৎ পরিবাহী।

বলা হচ্ছে, এটি অলৌকিক এক বস্তু এবং ভবিষ্যতের পৃথিবীতে এই গ্রাফিন হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তবে সমস্যা হচ্ছে, এক স্তরের এই গ্রাফিন বর্তমান পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা কঠিন। এতে খরচও অনেক বেশি। কিন্তু বিজ্ঞানী ড. নায়ার এখন বলছেন, ল্যাবরেটরিতে খুব সহজে অক্সিডেশনের মাধ্যমে গ্রাফিন অক্সাইড উৎপাদন করা সম্ভব।

পল্লব ঘোষ বলেছেন, গ্রাফিনের ওপর গবেষণায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে ম্যানচেস্টারে ন্যাশনাল গ্রাফিন ইনস্টিটিউট। এখানেই প্রথম এই উপাদানটিকে আলাদা করা হয়েছিল। এটিকে ব্যবহার করে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এখানকার বিজ্ঞানীরাই নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০১০ সালে। আর এখন এই গবেষণায় তারা আরো বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটালেন। আগে এর একটি সমস্যা ছিল। ঠিকমতো কাজ করত না গ্রাফিনের এই ছাঁকনি। কারণ একটা সময়ে এসে গ্রাফিন দুর্বল হয়ে পড়ত আর এর গায়ের ছিদ্রগুলো বড় হয়ে যেত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন এর গায়ে কিছু রাসায়নিক মেখে দিয়েছেন যার ফলে ছিদ্রগুলো বড় হতে পারে না।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে সমুদ্রের পানিকে লবণমুক্ত করা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। কিন্তু গ্রাফিনের ছাঁকনিটি হবে সহজলভ্য এবং সস্তা। তবে এই ছাঁকনিটি বাস্তবেও ল্যাবরেটরির মতোই লবণকে পানি থেকে আলাদা করতে সক্ষম হবে কি না সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist