নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ অক্টোবর, ২০২৪

সাবেক সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়ম

সৌরবিদ্যুতে বড় সম্ভাবনা থাকলেও প্রসার ঘটেনি

১০ কেন্দ্র স্থাপনে ঝুলছে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান * ব্যয় বেড়েছে বার্ষিক ক্ষতি ৭০ হাজার কোটি টাকা

বিশ্বজুড়েই বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বাড়তি উৎপাদন খরচের কারণে বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন- দুটিই বাড়ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বড় সম্ভাবনা এখন সৌরবিদ্যুতে। কিন্তু সাবেক সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে খাতটির প্রসার ঘটেনি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং খাতের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও বেসরকারি খাতে গ্রিড সংযুক্ত ১০টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রই এখনো আহ্বান করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিলেও দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগ বেসরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং মোট ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করতে বিপিডিবিকে নির্দেশ দেয়।

সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ) আইন-২০১০-এর অধীনে আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্রের এ পদক্ষেপ। ফলে বেসরকারি খাতের গ্রিড-সংযুক্ত প্রস্তাবিত ৩৪টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এর আগে দরপত্রের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) জারি করেছিল বিপিডিবি।

সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা : বিষুবরেখার সন্নিকটে হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ৪.০-৬.৫ কিলোওয়াট আওয়ার বা বর্গমিটার সৌর বিকিরণ লাভ করে। অনুমান করা হয় যে ছাদের ওপর, নদী, হাওর, পুকুরের মতো জলাশয়ে, চা-বাগানের অনাবাদি জমি ও ভূমিতে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম থেকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ২৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশের খসড়া জাতীয় সৌরশক্তি রোডম্যাপে ২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এস ম্যাপ প্রস্তুতকৃত বাংলাদেশের সৌরসম্পদের ম্যাপ থেকে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে, উপকূলীয় দ্বীপগুলো ও পার্বত্য এলাকায় সৌর বিকিরণ অধিক বিধায়, সেসব এলাকা সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অধিকতর উপযোগী।

বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা : আগে ধারণা করা হতো, বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের তেমন সম্ভাবনা নেই। সম্প্রতি মার্কিন জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি পরীক্ষাগার পরিচালিত মূল্যায়ন থেকে বাংলাদেশের বায়ুবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অতীতের অনুমিত পরিমাণ থেকে বেশি বলে জানা যায়। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এজন্য বিশেষ উপযোগী। বাংলাদেশে বায়ুর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৭.৭৫ মিলি বা সেকেন্ড, যা দিয়ে ৩০ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, দেশের মোট জমির ৪ শতাংশ ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ জ্বালানি চাহিদা মেটানো সম্ভব।

অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তি : নদীর অবিচ্ছিন্ন ধারা ও জলপ্রপাত (রান অব দ্য রিভার) বা জলাধার সৃষ্টি- এ দুই প্রক্রিয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশে রান অব দ্য রিভার ও জলপ্রপাত ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা সীমিত। আবার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব, জটিল ও ব্যয়বহুল পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার কারণে নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাইর মতো জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব নয়। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝর্ণা (ক্ষুদ্র জলপ্রপাত) ব্যবহার করে ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ আছে। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোয় সীমিত পরিমাণে ভূতাপীয় (জিও থার্মাল) জ্বালানি সম্ভাবনা আছে। ধারণা করা হয়, বায়োমাস থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ মেটানো হয়ে থাকে। বায়োমাস ও বর্জ্য ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।

দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি (বিশেষ) আইন-২০১০-এর আওতায় ‘অপ্রত্যাশিত অফার’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপিডিবি এসব প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে। এ আইনের আওতায় সরকার টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই যেকোনো বেসরকারি সংস্থাকে প্রকল্পের চুক্তি দিতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি-অনিয়মের মূল কারণ হিসেবে এ বিশেষ আইনের সমালোচনা করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ, অনেক অযোগ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং খাতের বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা। ফলে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় এবং দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি আইন (বিশেষ) আইন-২০১০-এর অধীনে আইনটি স্থগিত এবং আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close