প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় দেশের উত্তরাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দিনেরবেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন। চরাঞ্চলের ও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের কষ্ট বেড়েছে। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, কুড়িগ্রামের রৌমারী, দিনাজপুরের কাহারোল, গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ, নাটোরের প্রতিনিধিদের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবেদনটি তৈরি করা হলো :

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় হিমেল বাতাস আর ঘনকুয়াশায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। তেঁতুলিয়া ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বদলগাছিতে বিরাজ করলেও পঞ্চগড়ে এক সপ্তাহ ধরে ৯ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।

এদিকে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় চারদিক ঢাকাছিল। দুপুর গড়িয়ে যাওয়ার পর সূর্য উঁকি দিলেও রোদের তেজ ছিল না। মহানন্দা নদীর কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেক শ্রমিক পেটের তাগিদে শীত উপেক্ষা করে কাজ করছেন।

দিনাজপুরের কাহারোলে কয়েকদিন ধরে রাত ও দিনেরবেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশা আর শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন মানুষজন। গত শুক্রবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত কুয়াশার আবরণে ঢাকাছিল কাহারোল উপজেলাসহ আশপাশের এলাকা। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষকে বের হতেই হচ্ছে। স্থানীয়রা বলেছেন, এলাকায় খুবই ঠান্ডা পড়েছে। ঘন কুয়াশায় কিছু দেখা যাচ্ছে না। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। এলাকাটি হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় এসময় প্রচণ্ড শীতে কাঁপতে হয়।

নাটোরে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে পড়ছে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ৩ দিন ধরে সুর্যের মুখ দেখা যায়নি। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। সন্ধ্যার পর থেকে চারদিকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে। কৃষক আমজাদ, করিম, দিনমজুর আক্কাস আলী, শরিফ জানান, প্রচণ্ড শীতে কষ্ট হলেও জীবিকার তাগিদে বাইরে যেতেই হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জে ঘন কুয়াশা আর কনকনে হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীতে জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্ন আযের খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছিছে। বিপাকে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। সকাল ১০-১১টার আগে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। শহরের বিভিন্নস্থানে খড়কুটোতে আগুন লাগিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন ছিন্নমূল মানুষ। পুরোনো কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে।

বকশিচর গ্রামের জায়েদ আলী ভোরে কুয়াশা আর কনকনে শীতের মধ্যে খেতের কপি তুলছিলেন। তিনি বলেন, কষ্ট করে খেতের কপি তুলছি বাজারে বিক্রির জন্য। না হলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শহরের রিকশাচালক মুনছুর আলী জানান, শীতে রাস্তায় মানুষ কম। তাই রোজগার কমে গেছে। রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকচালক আকবর আলী জানান, ঘন কুয়াশায় সাবধানতার সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালাতে হচ্ছে। গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে বেশি। এদিকে শিশু ও বৃদ্ধদের মাঝে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো চারা, সবজি ও আলুখেতে শীতজনিত নানান রোগবালাই দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধায় গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তাতে কোনো উত্তাপ ছিল না। ঘন কুয়াশায় তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ অন্য নদ-নদীতে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

তীব্র ঠান্ডায় জমিতে কাজ করতে পারছেন না চাষি। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে খেতের সবজি, সরিষা ও বোরো ধানের চারা। জেলার সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় শীতের দাপটে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৭টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতে কষ্টে পড়েছে উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ।

উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের গাড়িচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ আরো বেশি ঠান্ডা। হাত-পা বরফ হয়ে যায়। গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গাড়ি চালিয়ে আমার সংসার চলে। গাড়ি না চালালে আমার পরিবারসহ সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের নটানপাড়া গ্রামের আজাহার আলী বলেন, আমি বোরো বীজতলা তৈরির কাজ করছি। পানিতে হাত দেওয়া যায় না, এত ঠান্ডা। তারপরও হামাগুলার কাজ ছাড়া উপায় নাই। কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠা-নামা করছে। এ মাসের ১৫ তারিখের পর শৈত্যপ্রবাহ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে ১১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সিনপটিকে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজমান লঘুচাপটি বর্তমানে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপমহাদেশীয় উচ্চবলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর উত্তরপূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে তাপমাত্রা আরো কমতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close