খুলনা ব্যুরো

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২২

সুন্দরবনে নৌযান চলাচলে সকালে নিষেধাজ্ঞা, রাতে প্রত্যাহার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে পর্যটক ও নৌ-পরিবহনসহ সব ধরনের নৌ-চলাচলে সকালে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা রাতে প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সঙ্গে যৌথসভা শেষে সীমিত সংখ্যক যাত্রী পরিবহনসহ কয়েকটি শর্তে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

এর আগে, বুধবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

অপরদিকে, সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের নেতারা এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় এ দুটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তাদের বিআইডব্লিউটিএর খুলনা আঞ্চলিক অফিসে সভা করে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সভায় কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলসহ বেশ কয়েকটি শর্তে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

এ বিষয়ে ট্যুর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মইনুল ইসলাম জমাদ্দার প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সরকার যে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, সেখানে নৌ-পরিবহন বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই, তাহলে আমরা এটা কেন মানব?’ তিনি বলেন, ‘আমরা সীমিতসংখ্যক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ও জাহাজ পরিচালনা করব।’

খুলনা নদীবন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে সুন্দরবনে ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সভা শেষে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সীমিত সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচলসহ আরো কিছু শর্ত দিয়ে পর্যটন নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা নদীবন্দরের বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবন ভ্রমণে নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএর প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে ওই নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারই আলোকে তিনি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

এর আগে বুধবার সুন্দরবন ভ্রমণে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি চিঠি দেওয়া হয় সুন্দরবন ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ, শিক্ষা সফর, বনভোজন, নৌ-ভ্রমণ ও নৌ-বিহারে ট্যুরিস্টবাহী নৌযান ও লঞ্চগুলো চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো। বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে এখনো সুন্দরবন ভ্রমণের বিষয়ে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। সব এখনো স্বাভাবিক নিয়মে চলছে।’

সুন্দরবনে ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুরিস্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সব ট্যুর অপারেটরদের নৌযান বুকিং দেওয়া আছে। অনেকেই অগ্রিম টাকা নিয়ে খরচও করে ফেলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওই নিষেধাজ্ঞা ট্যুর অপারেটরদের বিপাকে ফেলবে। ওই নিষেধাজ্ঞার পর যেসব নৌযানের সুন্দরবনে ট্যুর নিয়ে যাওয়ার কথা তারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন তা কেউ বুঝে ওঠতে পারছেন না। এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হলে ওই বছরের ১ নভেম্বর থেকে স্বল্প পরিসরে সুন্দরবন ভ্রমণের সুযোগ দেওয়া হয়। এর সাড়ে সাত মাস পর ফের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে ফের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সাড়ে চার মাস বন্ধের পর ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর আবারও সুন্দরবন ভ্রমণ শুরু হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close