শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি

  ২১ অক্টোবর, ২০২৪

মাগুরার শালিখা

দেখা যায় না মাটির গোলা কমেছে কৃষকের ধান সংরক্ষণ

আগের মতো দেখা যায় না গ্রামগুলোতে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধানের গোলা। তবে এখনো গুটি কয়েক বাড়িতে রয়েছে ধানের গোলা ও মাটির কোলা। এমনি একটি ধানের গোলার সন্ধান পাওয়া গেছে মাগুরার শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের পিপরুল গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে। বাচ্চু মিয়া দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে ধানের গোলা।

জানা গেছে, আবহমান কাল ধরে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যবহার করা হতো এই গোলা। বাঁশ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি গোলাকৃতির কাঠামোয় তৈরি হয় গোলা। গোলাকৃতির কাঠামোতে এঁটেল মাটির মন্ডপ দিয়ে তৈরি করে ভিতরে মাটির প্রলেপ লাগিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে তার উপর পিরামিড আকৃতির টিনের চালা দিয়ে ঢাকনাকারে তৈরি করা হয় ধানের গোলা। ধান বা যে কোনো শস্য ওঠানো বা নামানোর জন্য রাখা হতো ছোট দরজা যেখানে ব্যবহার হতো কাঠ ও লোহার দণ্ড। তবে তার চারপাশে মাটি কাঁদার প্রলেপ লাগিয়ে বন্ধ করে দেয়া হতো চারপাশের ছিদ্র। এ ছাড়া মটোর-সূটি, সরিষা, গম, ভুট্টা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতো মাটি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাটির কোলা তাও এখন নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণের অন্যতম ধানের গোলাটি বছরের পর বছর ধান সংরক্ষণ করলেও তাতে কোনো ছত্রাক বা পোকা ধরত না।

বাচ্চু মিয়া জানান, ছোটবেলায় দেখেছেন ছেলে-মেয়েদের বিবাহ বা যে কোনো সম্বন্ধ করতে গেলে অন্য কিছু দেখার পাশাপাশি দেখা হতো মেয়ে-ছেলেদের বাড়িতে ধানের গোলা বা পুকুর ভরা মাছ আছে কি না। এ ছাড়া কোনো বাড়িতে ধানের গোলা থাকলে ধনাঢ্য কৃষক বা সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিচয় বহন করত।

বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী রিতা খাতুন বলেন, গোলার যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। ধানের গোলাতে ধান ওঠাতে বা নামাতে একাধিক লোকের প্রয়োজন হয়। অপরদিকে একটা ধানের গোলাতে দুই বা ততোধিক ধান পাশাপাশি রাখা যায় না। ধানের গোলাতে ফসলাদি উঠা-নামা করাতে বেশ কষ্ট পেতে হয়। তবে দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণে ধানের গোলার বিকল্প নেই।

শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এর প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, পূর্ব পুরুষের ব্যবহৃত কৃষ্টিগুলো সংরক্ষণপূর্বক নতুন প্রজন্মের শিশুদের কাছে তা তুলে ধরা প্রয়োজন। এতে একদিকে যেমন নবপ্রজন্মের শিশুরা শিকড়ের সান্নিধ্য পাবে অপরদিকে তারা অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবে।

উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আলী আশরাফ বলেন, ধানের গোলায় রক্ষিত ধানের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। ধানের গুণগত মানও ভালো থাকে। তাই দীর্ঘদিন ধান সংরক্ষণে এই গোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close