আশরাফুল ইসলাম, শ্রীপুর (গাজীপুর)
গাজীপুরের শ্রীপুর
উচ্ছেদের পর খোলা আকাশের নিচে অর্ধশতাধিক পরিবার
সরকারি বনভূমির খাসজমি থেকে উচ্ছেদের পর খোলা আকাশে নিচে বসবাস করছে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের কাফিলাতলী গ্রামে গত ২৬ নভেম্বর বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের পর এমন দৃশ্য দেখা গেছে। উচ্ছেদের পুর্বে মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করা হলেও অনেকে তাদের ঘরের আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে পারেননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে একাধীক ভুক্তভোগী ও স্থানীয় লোকজন জানান, জমি কিংবা ভিটেমাটি কিছুই নেই। তাই খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল দিয়ে আবার কেউ ছালারচট দিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। আতঙ্ক আর ভয় নিয়েই এমন ভাবে বসবাস করছেন ভূমিহীন পরিবারগুলি। রান্নাবান্না, বিদ্যুৎ, মোটরের পানি এবং পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় ভাঙা ঘরে ছেলে মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তারা আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবার বন বিভাগের সরকারি খাস জায়গায় বসবাস করে আসছিল। গত ২৬ নভেম্বর বিনা নোটিশে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু এই পরিবারগুলোর কোনো জমিজমা কিংবা ভিটেমাটি না থাকায় তারা খোলা আকাশের নিচে কেউ অন্যের বাড়িতে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছে। সরকারি খাস জমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান হলেও রয়ে গছে প্রভাবশালীদের পাকা বাড়িঘরগুলো।
ভুক্তভোগী পরিবারের মধ্যে ওই এলাকার মৃত শহিদ পাটুয়ারীর স্ত্রী জোছনা আকতার জানান, এখানে তিনি ত্রিশ বছর ধরে বসবাস করছেন। এখন ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে। তাই বাসস্থানের প্রয়োজনে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে দুটি ঘর করেছিলেন। ঘর দুটি ভেঙে দিয়েছে। ঘর থেকে একটা হাঁড়িপাতিলও বের করার সুযোগ দেয়নি। বর্তমানে আমার পুত্রবধূ, মেয়ে ও নাতি, নাতনিদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। তিনি সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা কীভাবে এই শীতের মধ্যে রাত্রিযাপন করব। আমাদের এই জায়গা ছাড়া কোথাও থাকার মতো জায়গা নেই। আমাদের পুনর্বাসন করুন, আমাদের থাকার জায়গা দিন।’
আতিকুল ইসলামের স্ত্রী শাহিদা আক্তার বলেন, একটা ঘরের জন্য ছেলেকে বিয়ে করাতে পারিনি। বন বিভাগের লোকজনকে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি রুম করেছিলাম।এর আগে একটি গোসলখানা করার জন্য ১৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এখন আবার তারাই বিনা নোটিশে ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছে। এখন খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। যারা টাকা নিয়ে আমাদের ঘর করার সুযোগ করে দিয়েছিল আমরা তাদেরও শাস্তি চাই।
একই সঙ্গে দুলাল মিয়া বলেন, আমি ত্রিশ বছর ধরে একটি মাটির ঘরে বসবাস করছি। প্রয়োজনের তাগিদে একটি ঘর করতে চেয়েছিলাম। বন বিভাগের লোকজন আমার কাছে ৬০ হাজার টাকা চেয়েছে। আমি গরিব মানুষ এতো টাকা দিতে পারিনি বলে আমাকে ঘর করতে দেয়নি। তবে জারা বন বিভাগের জায়গায় নতুন ঘর করেছে সবাই বন বিভাগের লোকজনকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই ঘর করেছে। টাকা ছাড়া একটি বার্থরুমও কেউ করতে পারেনি।
বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান রিপন জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে ব্যাপক হারে বনভূমি দখল হওয়ায় এই অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো
জানান, জনবল সংকটের কারণে
আগে এই অবৈধ দখল থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে আমিও কিছুটা শুনেছি অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে আমাদের কাছে কেও কোন আবেদ করেনি। আবেদন করলে হয়তো কিছু একটা করার জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। তারা বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
"