টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া
কাঠের খুঁটি-তক্তায় সেতুতে ঢালাই, টেকসই নিয়ে শঙ্কা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাঘিয়ার নদীতে সেতুর ভায়াডাক্ট (সিরিজ সেতু) নির্মাণের কাজ। গত কয়েক বছর ধরে কাজটি চললেও অর্ধেক কাজ শেষ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ভায়াডাক্ট নির্মাণে অনিয়ম আর ধীরগতি বর্তমানে জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হতে টুঙ্গিপাড়া হেডকোয়ার্টার সড়কে ৩০০ মিটার ভায়াডাক্ট (সিরিজ সেতু) নির্মাণের কাজ করছে ফরিদপুরের মেসার্স জান্নাত কন্সট্রাকশন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি করছেন। কাজের প্রাক্কলন মোতাবেক লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং (স্টিল সিট) ব্যবহার করে ঢালাই করার বিধান থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে গাছের চিকন বল্লি এবং কাঠের তক্তা ব্যবহার করে ভায়াডাক্টের কনক্রিড ঢালাই কাজ করছে। এমনি ডায়াডাক্টের পাইলের লোড টেস্ট না করেই পাইল ক্যাপ নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সচেতন জনসাধারণ নিষেধ করা সত্ত্বেও উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সামাদের সহযোগিতায় এমন কাজ করেছে ঠিকাদার। এমনকি এলাকাবাসী কাজের বরাদ্দ দেখতে চাইলে তাদের কথায় কর্ণপাত না করে তিনি দেন কঠোর হুমকি।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে টুঙ্গিপাড়া এলজিইডির প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তথ্য দিতে তালবাহানা করেন তিনি। এছাড়া ভায়াডাক্টের কনক্রিড ঢালাইয়ের কাজে গাছের বল্লি ব্যবহার ও পাইলের লোড টেস্ট করা হয়েছে কি না সে বিষয়েও কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন তিনি। আর কয়েকদিন এলজিইডি দপ্তরে ঘুরেও পাওয়া যায়নি প্রয়োজনীয় তথ্য।
ডুমুরিয়ার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য খোকন তালুকদার বলেন, কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং ব্যবহার করার কথা। কিন্তু সেটা ব্যবহার না করে গাছের বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং করে ডায়াডাক্টের কনক্রিড ঢালাই দেয়া হচ্ছে। এতে কলামের স্লাপ সবদিকে সমান হয় না। এছাড়া পাইলের লোড টেস্ট না করেই মন মতো কাজ করে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই হুমকি পেতে হচ্ছে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে তারা অনিয়ম আর ধীরগতিতে কাজ করে চলেছেন।
ডুমুরিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা সঙ্কর বিশ্বাস, নৃপেন বৈরাগী, অতুল বিশ্বাস সহ অনেকে বলেন, আর কতদিন ধরে এই কাজ চলবে তাই বুঝিনা। সেই কবে থেকে দেখছি কাজ চলছে। কিন্তু শেষ আর হয় না। এতে দিন দিন মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। রাস্তায় দেওয়া কলামের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও ঘটছে।
এ বিষয়ে ওই কাজের ঠিকাদার হাবিবুর রহমান হাবিবকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগরে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা দিয়েও কোনো সারা মেলেনি। তবে কাজের শ্রমিক সর্দার সিদ্দিক হোসেন বলেন, লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং ছাড়া কাজ করা যাবে না। তাই লোহার পাইপ ও স্টিল সাটারিং কিনতে পাঠিয়েছি। প্রায় অর্ধেক কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাইপ আনার পর বাকি কাজ শুরু হবে।
এদিকে জান্নাত কন্সট্রাকশনের প্রকৌশলী রবিউল আলম রনি মুঠোফোনে জানান, গাছের বল্লি দিয়ে কাজ করা যাবে না বলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কাজটি সম্পন্ন করতে ১০০-১৫০ লোহার পাইপ প্রয়োজন। এগুলো কিনতে ১০-১৫ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ তাই বর্তমানে কাজটি বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
টুঙ্গিপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ মুঠোফোনে বলেন, ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষ গাছের
বল্লি ও কাঠ দিয়ে সাটারিং করে ভায়াডাক্টের কনক্রিড ঢালাই দিচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি লোহার পাইপ দিয়ে কাজ করার জন্য।
"