এস এম রাফি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

পাউবো প্রকৌশলীর স্বেচ্ছাচারিতা

অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে পিছু ছাড়ছে না কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনের। টেন্ডার ড্রপে বাধা, টাস্কফোর্স দ্বারা বাতিলকৃত জিও ব্যাগ ডাম্পিং, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভিটা, ভুট্টা ও আলু খেত ভেকু দিয়ে কেটে ঢালু করা, ঠিকাদারের কাজ নিজে করাসহ নানা অনিয়েমের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রাধীন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের কারেন্ট বাজার এলাকার নদী ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে ছয় কোটি টাকা জরুরি বরাদ্দ দেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। কাজটি নিজের করে রাখতে শুরু থেকেই কারসাজির আশ্রয় নেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী। ই-জিপি হলেও কাজটি পেতে যোগাযোগকারী ঠিকাদারদের টেন্ডার ড্রপ করতে নিরুৎসাহিত করেন তিনি। পছন্দের ঠিকাদার ঠিকাদার হাসিবুল হাসানকে পাইয়ে দিয়ে কাজটি নিজেই করছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। মূল ঠিকাদার না থাকায় কাজে ভাগ বসিয়েছেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এখন এক কিলোমিটার কাজের ৫০০ মিটার এমপি ও বাকি অর্ধেক কাজ করছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সঠিক সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় যে এলাকা রক্ষার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা ভেঙে গেছে। লোকালয় ছেড়ে এখন চরের কিছু জমি রক্ষায় কাজ হচ্ছে। সেখানেও অনিয়মের অভিযোগ স্থানীয়দের।

গত ১৪ জানুয়ারি কারেন্ট বাজার এলাকায় বস্তা গণনা করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স কমিটির দুজন সদস্য। জিও ব্যাগ গণনার আগে কাজের মান ও স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জিও ব্যাগ ও বালুর মান ঠিক আছে। কাজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।

বালুর বস্তা গণনার সময় উপস্থিত থাকা স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, এখানে দুটি গ্রুপে কাজ হচ্ছে। অফিসের গ্রুপ আর এমপির গ্রুপ। কোনো ঠিকাদার এখানে কাজ করছেন না। অফিসের গ্রুপের কাজে স্থানীয়রা ধরে ধরে যেসব বস্তা দেখিয়ে দিয়েছি তার কিছু বস্তা রিজেক্ট করা হয়েছে। এর পরিমাণ ১৫০০ এর মত। গণনা করেছে রিজেক্ট বস্তাসহ সাড়ে ১১ হাজার। এখন তারা যদি সাড়ে ১১ হাজার বস্তা কাউন্ট দেখিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই রিজেক্ট বস্তাও হিসাবের তালিকায় দেখানো হয়েছে। এমপির গ্রুপে গণনা করা হয়েছে সাত হাজার ৪২৬। এখানে রিজেক্ট বস্তার পরিমাণ কম।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে কাজ করা কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে জানায় যায়, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সখ্যতা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনের। এ সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছেন তিনি। সঠিকভাবে টেন্ডার ড্রপ করেও শুধু লেনদেনের সম্পর্ক না থাকায় কাজ পায়নি তারা। এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বদলিসহ বিভাগীয় শাস্তি চান ভুক্তভোগী এসব ঠিকাদার।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কারেন্ট বাজারের সাড়ে ছয় কোটি টাকার কাজটি করতে টেন্ডার ফেলতে চেয়েছিলাম। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি টেন্ডার ফেলতে নিষেধ করায় ফিরে এসেছি। আমি সেদিনই তার কথা-বার্তায় বুঝতে পেরেছি, কাজটি তিনি নিজে করবেন। তিনি আমাকে খাল খননের আরেকটি কাজে ডেন্ডার ড্রপ করতে বলেছিলেন। টেন্ডার ফেলেও ছিলাম। কিন্তু তার একের পর এক টেন্ডার বহিঃর্ভুত শর্তের কারণে তা প্রত্যাহার করেছি। এতে আমাকে ব্যাংক পে অর্ডারে এক লাখ ২৩ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।

ভিটা ও আবাদী জমি ঢালু করে বস্তা ফেলার অভিযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বার বার অনুরোধ করেছি যাতে আমাদের শেষ সম্ভব ভিটা ও আলুর খেত ঢালু না করা হয়। প্রয়োজনে যেন নদী গভীর করে সেখানে বস্তা ফেলা হয় তা কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছি কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি। উপ-বিভাগী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও উপ প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জোর করে আমাদের জমি কেটে নষ্ট করছেন। বলতে গেলেও তারা আমাদের হুমকিও দিয়েছেন। আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

রিজেক্ট বস্তা ডাম্পিংয়ের কথা স্বীকার করে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বস্তাগুলো ফেলে না দিয়ে আমরা ডাম্পিংয়ের নির্দেশ দিয়েছি। এগুলো কাউন্ট (হিসাব) করা হয়নি। আবাদী জমির স্লোপিংয়ে (ঢালুকরণে) কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। এমন কোনো নিয়ম নেই। সঠিক নিয়মেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাতিলকৃত বস্তা ফেলানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের এটা জরিমানা, আর সেগুলো তো গণনার বাইরে, ফেললে বরং উপকার। রিজেক্ট বস্তা হিসাবের তালিকায় উল্লেখ করার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close