আনোয়ার হোসেন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

হারিয়ে যাচ্ছে কুশসি

গ্রাম-বাংলার কৃষকের নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য কৃষি উপকরণের ইতিহাস হাজার বছরের প্রাচীন ও পুরোনো। যে উপকরণ ছাড়া চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা যেত না। এখন সময়ের সঙ্গে যান্ত্রিকতার ছোঁয়ায় কৃষি খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের ধারায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ে জমি উত্তমরূপে পরিচর্যার অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ কুশসি।

জানা গেছে, কুশসি হাতলবিশিষ্ট এক ধরনের হ্যামার, যা ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি বাঁকানো পরিপাটি বাঁশের মুড়ার মাঝ বরাবর ছিদ্র করে সেখানে পরিমাণ মতো লম্বা চিকন শক্ত লাঠি সংযুক্ত করে হ্যামার বা কুশসি তৈরি করা হয়। এ কুশসি দিয়ে কৃষকরা হালচাষের সময়ে লাঙ্গলের ফলায় ভেসে ওঠা শক্ত চাপা, ধলা কিংবা মই ব্যবহারের পর জমির উপরিভাগে ভেসে ওঠা বড় বড় চাক ভাঙার কাজে ব্যবহার করত। বিভিন্ন এলাকার দোলা শ্রেণির এঁটেলযুক্ত মাটি হালচাষ কিংবা মই ব্যবহারে সহজে আবাদে উপযোগী করা কষ্টসাধ্য ছিল। তখন প্রান্তিক কৃষকরা অতি তাড়াতাড়ি ফসলি জমি প্রস্তুত করতে কুশসি দিয়ে হাতের পিটুনিতে চাপা ধলা, ইটা ভেঙে চুরমার করত। এতে পরবর্তীতে হালচাষ ও মইয়ের ব্যবহার কম লাগত। জমিও উত্তমরূপে আবাদে উপযোগী (মসৃন) হয়ে উঠত। এখন কৃষি যান্ত্রিকতার যুগে দ্রুত গতির পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টরে জমিচাষাবাদ করায় নিমিষে জমির আস্তরণ চুরমার হচ্ছে। এতে যেমনটাই হারিয়ে গেছে হালের লাঙ্গল, জোয়াল, মই তেমনি একই সখ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে লোকায়েত জ্ঞানের কৃষকের পরমবন্ধু কুশসি। তবুও বাপ-দাদার রেখে যাওয়া আদি কৃষি উপকরণ হারিয়ে যেতে দেননি উপজেলার রনচন্ডি ইউনিয়নের অবিলের বাজার গ্রামের লাভলু মিয়া।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই কৃষক নমলা আলুর খেতের সারিতে সয়লাব হয়ে থাকা বড় বড় ইটা কুশসি দিয়ে হাতের পিটুনিতে ভাঙ্গছেন। এসময় তিনি বলেন, বাপ-দাদারা হালচাষ ও মই ব্যবহারের পর ভেসে ওঠা চাপা, ধলা, কুশসি দিয়ে পিটিয়ে জমি চাষাবাদ করত। পাশাপাশি ফসল রোপণ-বপনের পর জমির উপরিভাগে জমানো ইটা ভাঙ্গার একমাত্র অবলম্বন ছিল।

শ্রমিক পরিচর্যার বদলে কুশসি দিয়ে ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, এই কাজে এক বিঘা জমিতে শ্রমিক খরচ হত ৩ হাজার টাকা। যা কুশসি দিয়ে ৪০০ টাকার শ্রমিক মজুরিতে ভাঙ্গানো (পরিচর্যা) সম্ভব হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কায়িক শ্রমে রোগবালাই ঝুঁকি কমছে অন্যদিকে শ্রমিক মজুরি সাশ্রয় হচ্ছে। এখনকার মানুষ যন্ত্রনির্ভরশীল হয়ে অলস হয়ে পড়েছে। কায়িকশ্রম না করায় ডায়াবেটিকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বিনা খরচে পূর্বপুরুষদের এ উদ্ভাবন কৃষিকাজে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন তা বিলুপ্তির পথে।

বাহাগিলী ইউপির উত্তর দুরাকুটি গ্রামের প্রবীণ কৃষক আবু বক্কর বলেন, ১৫-২০ বছর আগেও এ সনাতন পদ্ধতির কদর ছিল। এখন কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের আগমনে প্রাচীনকাল থেকে মানুষের সঙ্গে এই যন্ত্রের সম্পর্ক। কিন্তু এর শেষ ব্যবহারটুকু হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কৃষি কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বর্তমানে ও কুরশির ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে বর্তমান প্রজন্ম আমাদের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close