চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। শুধু চুনতিসহ লোহাগাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে ১৪টি। অন্যদিকে, সড়কের দুপাশ দখল করে দোকানপাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া সড়কের দুপাশ সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা, জিপ, কার-মাইক্রো, বাসসহ যত্রতত্র গাড়ি ও ফুটপাতের কোনো কোনো স্থান গ্যারেজের দখলে। এতে প্রতিনিয়ত যানজটসহ ঘটছে অসংখ্য ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত মহাসড়কের পটিয়ার শান্তির হাট, মুন্সেফ বাজার, থানা মোড়, ডাকবাংলো, বাসস্ট্যান্ড, দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ার বটতলীতে যানজট চরম আকার ধারণ করে। চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর শাহ্ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার দূরত্বের ২০টি পয়েন্টে সড়কের দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে গাড়ির স্ট্যান্ড, গ্যারেজ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আর ৯টি পয়েন্টে বসে নিয়মিত হাটবাজার। এ অংশের সড়কে ৪৫টি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। ফলে সড়কটিতে রীতিমতো যানজট সৃষ্টিসহ দুর্ঘটনা সাধারণ বিষয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির পটিয়া মইজ্জার টেক, পটিয়া-আনোয়ারা ক্রসিং টেক, মনসার টেক, বাদামতল টেক, পটিয়া পোস্ট অফিস টেক, গৈরালার টেক, আঞ্জুরহাট টেক, পটিয়া পোস্ট অফিস টেক, আদালত গেট মোড়, থানা মোড় ডাকবাংলা মোড়, কমলমুন্সির হাট টেক মিলে ২০টি পয়েন্টে এবং চন্দনাইশ থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত ২০টির অধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।

অন্যদিকে পটিয়ার শান্তির হাট, মুন্সেফ বাজার, থানা মোড়, ডাকবাংলা মোড়, বাসস্ট্যান্ড, রওশনহাট, বাগিচার হাট, কমলমুন্সির হাট, চক্রশালা, হাসিমপুর, আঞ্জুরহাট, দোহাজারী বাজার, মৌলভীর দোকান, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, ঠাকুরদিঘী, লোহাগাড়া পদুয়া তেওয়ারীহাট, বটতলী, আধুনগর বাজার ও চুনতি মুন্সেফ বাজারে রাস্তার দুপাশে অবৈধ দোকানপাট, যত্রতত্র গাড়ি রাখা, গাড়ির গ্যারেজ ও বাজার বসার কারণে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট দেখা দেয়।

গাড়ির চালকরা জানান, মহাসড়কের দুপাশের ফুটপাত দখল ও যত্রতত্র গাড়ি রাখা হয়। সড়কটি এত বেশি আঁকাবাঁকা যে প্রতিনিয়ত অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়ার চুনতি পর্যন্ত ৬৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ১ ঘণ্টার পরিবর্তে ২ ঘণ্টার অধিক সময় লেগে যায়। সড়কটির দুপাশ অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ সোজা প্রশস্ত হলে যানজটমুক্ত ও দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।

নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার আহ্বায়ক মুজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এত বেশি আঁকাবাঁকা সড়ক চালকদের অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চালাতে হয়। এ মহাসড়কের দুপাশে অবৈধভাবে বিভিন্ন যানবাহনের যত্রতত্র অবস্থান এবং ফুটপাত দখল হওয়ার কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। তাই ফুটপাত দখল উচ্ছেদ, বাঁক সরলীকরণসহ মহাসড়কটিকে ছয় লেনে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মো. আবদুর রব জানান, হাইওয়ে এলাকার সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অংশে গত ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনা রাতে ও ভোরবেলায় হয়েছে। বেপরোয়া গতি ও চালকের চোখে ঘুম সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ বলে তিনি জানান।

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজর মহাসড়কের বাঁকগুলো সরলীকরণসহ রাস্তাকে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। বুয়েট কাজটি করছে। ডিসেম্বর মাসে বুয়েট থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ডিজাইন শেষে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

"