মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর বাজারে বেস্টওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (বিএমসি এন্টারপ্রাইজ) নামের এক এনজিওর মালিক লাপাত্তা। প্রায় দুহাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে উধাও হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন। তিনি ওই এলাকার মাধবপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইয়াকুব মেম্বারের ছেলে। গ্রাহকদের আমানতের সংগ্রহকৃত টাকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার নামে গড়ে তুলেছেন ১০টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, গ্রাহকেরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাতে থাকেন আফজাল। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের চাপের মুখে গত ৯ অক্টোবর আফজাল হোসেন এলাকা থেকে উধাও হয়। এরপর থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চান্দহর বাজারে মজিবর রহমানের বিল্ডিং ভাড়া করে মাইক্রো ক্রেডিট অথোরিটির নিবন্ধন ছাড়াই কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে আফজাল হোসেন ২০১২ সাল থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। এরপর এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখ প্রতি মাসিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। আর তা দিয়েই তিনি নিজের মালিকানায় গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে- ঢাকাতে বালাদ মেটাল, সাভারে শেফা হোমিও হল, বালাদ ব্রেকারী, মানিকনগরে বালাদ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, মাধবপুরে ইকরা আধুনিক উচ্চবিদ্যালয়, চান্দহরে শেফা ফার্মেসী, বালাদ মুদি স্টোর ও গার্মেন্ট ব্যবসায়।

সরেজমিনে চান্দহর বাজারে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ওই এলাকার গ্রাহক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি দেড় বছর আগে লাখ প্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা লাভে বিএমসিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। দুই তিন কিস্তিতে লাভের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে তিনি লাভ তো দুরের কথা মূল টাকাও দিচ্ছেন না।

তিনি আরো বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবেও কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। ওই টাকাও নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অনেকেই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত জমা রেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গ্রাহকেরা তাদের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অভিযুক্ত বিএমসি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন গ্রাহকদের আমানতের ৭ কোটি টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনাকালিন ব্যবসায়িক ধসের কারণে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে এখনো ৪ কোটি টাকার উপরে সম্পদ আছে। আমি গ্রাহকদের আমানতের পুরো টাকা পরিশোধ করে দেব।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন, আমার জানামতে বিএমসিএস নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই এবং আমাদের কাছ থেকে কোন অনুমতিও নেয়নি।

"