মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৯ এপ্রিল, ২০২২

জমে উঠেছে চট্টগ্রামে ঈদ কেনাকাটা

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে। রমজানের দিনের চেয়ে রাতের বেলায় প্রায় সব নামিদামি মার্কেটই খোলা। ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর সাহরি সময় পর্যন্ত।

নগরীর আধুনিক শপিংমল, মার্কেটসহ এখন সর্বত্র কেনাকাটার ধুম লক্ষ্য করা গেছে। জিইসি মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজা, সানমার ওশ্যান সিটি, আমিন সেন্টার, সিঙ্গাপুর মার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টার, বিপণিবিতান (নিউমার্কেট), চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, ফিনলে সেন্টার, আমিন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, গুলজার শপিং, চকবাজারের চক সুপার মার্কেট প্রভৃতি বড় বড় অভিজাত মার্কেটগুলোতে ক্রেতারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এসব মার্কেটগুলোর আশপাশের সড়কগুলো পারাপারেও ক্রেতাদের আনাগোনায় ভিড় পরিলক্ষিত হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন উদ্বোধন করা হয়েছে কয়েকটি বড় শপিং মল। ক্রেতাদের ভিড় এসব নতুন মার্কেটেও।

ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে কেনাকাটায় ভিড় তত বাড়বে, এ বিষয়টি মাথায় রেখে ক্রেতাদের অনেকেই আগেভাগে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। আবার ঈদে নতুন কী কী পোশাক এসেছে, তাণ্ডও দেখতে আসছেন অনেকে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, টেরিবাজার, জহুর হকার মার্কেটেও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।

রমজানের শুরু থেকেই থান কাপড়, রেডিমেড কাপড় ও জুতোর দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন মার্কেটে ও অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেইলার্সগুলোতে পছন্দনীয় অর্ডারের ভিড় লেগেই আছে। সেলাই কারিগররা বলেন, ঈদ যত সামনে আসছে ক্রেতাদের দেওয়া অর্ডার সময়মতো দিতে তারা রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। সময়মতো যাতে ডেলিভারি দেওয়া যায় সেজন্য এখন দিনরাত কাজ করছেন তারা। আবার অনেক নামিদামি টেইলার্স নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

টেরিবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়। জামা-কাপড়ের জন্য চট্টগ্রামে অনেক প্রসিদ্ধ টেরিবাজার। একসময় কাপড়ের পাইকারি বাজার হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও সময়ের ব্যবধানে খুচরা কেনাকাটার জন্যও টেরিবাজার সুনাম কুড়াচ্ছে। কাপড়ের পাইকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সময়ের বিবর্তনে স্থান করে নিচ্ছে আধুনিক শপিংমল ও মেগাশপগুলো। নগরীতে অন্যান্য অনেক আধুনিক মার্কেট ও বিপণিবিতান থাকলেও ক্রেতারা এক মুহূর্তের জন্য হলেও ঢুঁ মারেন টেরিবাজারে। বছরজুড়ে বেচাকেনা যেমনই হোক, ঈদের আগে টেরিবাজারে পড়ে কেনাকাটার ধুম। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাড়ি, থ্রিপিস, শাটিং-সুটিং কাপড়ের জন্য আধুনিক শপিংমল প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এর মধ্যে পরশমণি, মেগামার্ট, মল-২৪, ভাসাভি, মনেরেখো, বৈঠকবাজার, মৌচাক, বড়বাজার, নিউ রাঙ্গুলি, মাসুম ক্লথ, রাজপরী, রাজস্থান, জারা, সানা ফ্যাশন মল, জাবেদ, মাহমুদিয়া, স্টার ট্রেডিং, আলো শাড়িজ ক্রেতাদের বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এগুলোর বেশিরভাগই এক দামের দোকান।

ব্যবসায়ীরা জানান, টেরিবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮৫টি মার্কেট রয়েছে। এখানে দোকানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। টেরিবাজারের বড় কাপড়ের দোকানের স্বত্বাধিকারী বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে একেবারে ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। কিন্তু এবার বেচাকেনায় স্বাভাবিকতা আসতে শুরু করেছে। অনেকে আগেভাগে কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। সব বয়সি লোকজনই মার্কেটে আসছেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান বলেন, গত দুই বছরে করোনার কারণে ব্যবসায় ছিল মন্দা। এখন করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। দুই বছরে ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে। অনেকে নতুন করে পুঁজি সংগ্রহ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। আশা করছি, এবার ব্যবসায়ীরা ঈদ ঘিরে লাভের মুখ দেখবেন।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা সুজন মিয়া বলেন, রমজান যতই এগোবে মার্কেটগুলোতে লোকজনের ভিড় বাড়বে। এতো ঠাসাঠাসির মধ্যে আরামে কেনাকাটা করা যায় না। তাই এবার একটু আগেভাগে এসেছি। তবে কাপড়ের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিপণিবিতান ওয়েলফেয়ার কমিটির সভাপতি মো. ছগীর বলেন, ঈদ উপলক্ষে শুক্রবারও বিপণিবিতান খোলা রাখা হয়েছে। রমজানের প্রথম দু-চার দিন বেচাকেনা একটু কম হলেও এখন ক্রেতাদের উপস্থিতি অনেক বেড়েছে। বেচাকেনাও আগের চেয়ে ভালো।

নিউমার্কেট, টেরিবাজার পেরিয়ে অদূরে ঐতিহ্যবাহী রেয়াজউদ্দিন বাজার। সুঁই সুতা থেকে শুরু করে পোশাক, প্রসাধনসামগ্রী, ভোগ্যপণ্য, তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, জুয়েলারিসহ সব ধরনের কেনাকাটায় রিয়াজউদ্দিন বাজার সুপরিচিত। ১২০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে সবকিছুই পাওয়া যায়। কম দামে ভালো পণ্যের জন্য ক্রেতাদের পছন্দের বাজার এটি। ঈদ ঘিরে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এ বাজারে ধনী-গরিব সব শ্রেণির ক্রেতার মেলবন্ধন ঘটে। সময়ের বিবর্তনে বন্দরনগরীতে অনেক নামিদামি মার্কেট-শপিংমল গড়ে উঠলেও রিয়াজউদ্দিন বাজার যেন এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, করোনা সংকটে দুই বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে এবার ব্যবসায় কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরেছে। এবার রমজানের শুরু থেকে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মাঝেও স্বস্তি ফিরছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো।

আগ্রাবাদ আখতারুজ্জামান শপিং কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল বলেন, করোনাজনিত স্থবিরতার কারণে বিগত দুই বছর তেমন ব্যবসা হয়নি। রমজানের শুরু থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এখন থান কাপড়, ছোটদের কাপড়, জুতো বেশি চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close