reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ আগস্ট, ২০১৬

ইলিশ রফতানি

দেশি চাহিদায় নজর দিন

মযহারুল ইসলাম বাবলা

নিকটজনেরা বলেন, বাজার করা নাকি আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। নয় তো শত ব্যস্ততায়ও বাজার করি কীভাবে! সারকথা হচ্ছে, আমি কারো বাজারে তৃপ্তি পাই না। নিজেই বাজার করি। অনেক ছোটকাল থেকে বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। বাজার করা আমার নেশা। এখন বর্ষাকাল, ভরা ইলিশ মৌসুম। পরিবারের সবার বায়না আমি বাজার থেকে কেন ইলিশ মাছ আনি না। বাজারে হাইব্রিড মাছের ছড়াছড়ি। আছে ভারত থেকে আমদানি করা মাছও। কিন্তু ইলিশ মাছ মানসম্মত সাইজ অনুযায়ী পাওয়া যায় না। ২৫০ গ্রাম থেকে বড়জোর ৫০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে ইলিশ মেলা ভার। সে কারণে ইলিশ কেনা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু পরিবারের পীড়াপীড়িতে এবং ইলিশ কেনার দাপাদাপিতে বাজারে গিয়েছিলাম কিনতে। মাত্র দু-তিনজন বিক্রেতার কাছে সর্বোচ্চ এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ পেলাম। সংখ্যায়ও কম। তবে দাম শুনে আঁতকে উঠেছি। একদাম এক হাজার দুই শ টাকা প্রতিটি। বহু চেষ্টা করেও দাম কমানো সম্ভব না হওয়ায় অগত্যা একটি ইলিশ কিনে বাসায় ফিরেছি। টেনেটুনে সেটি একবেলায় হয়ে যাবে। পরিবারের সবার চাহিদা পূরণে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করলেও; এক কেজির ইলিশ বারো শ টাকায় কিনে অনুশোচনায় দগ্ধ হতে দেরি হয়নি।

মনে পড়ে, গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে কলকাতায় ভ্রমণে গিয়ে বাঙালিদের মুখে ইলিশের আহাজারি শুনতাম। বিমানে গেলে ইলিশ মাছ ভেজে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে। ইলিশ মাছের কথায় তাদের চোখেমুখে অতৃপ্তির ভাব ফুটে উঠত। ইলিশবঞ্চিত কলকাতার বাঙালিদের হতাশার অভিব্যক্তি তাদের কথায়-আচরণে প্রকাশ পেত। বিশেষ করে, দেশভাগে ভিটেমাটি ত্যাগ করে জীবন বাঁচাতে পশ্চিমবাংলায় স্থায়ী হওয়া বাঙালদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক দেখেছি। যারা আমাদের ভাগ্যবান এবং নিজেদের দুর্ভাগা বলতে দ্বিধা করত না। ইলিশের জন্য তাদের আদিখ্যেতায় বিরক্তই হতাম। অথচ কী ভবিতব্য, আজকের বাস্তবতায় আমরা তাদের এবং তারা আমাদের ভাগ্যবরণ করেছে।

আমাদের সরকার বন্ধুত্বের প্রতিদানস্বরূপ দেশে উৎপন্ন বড় আকৃতির ইলিশ ভারতে রফতানি করে চলেছে। যার রফতানিমূল্য দেশের বাজারমূল্যের তুলনায় বহুগুণ কম। আমাদের তো আমদানিকারক দেশ হিসেবেই খ্যাতি সর্বাধিক। ইলিশ রফতানির গৌরবের মহিমায় রফতানিকারক দেশের সুনামও বোধকরি অর্জনের উছিলায় বন্ধুত্বের এই অকৃত্রিম অর্থনৈতিক ত্যাগ! ইলিশ রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। এটাও আমাদের জন্য গৌরব ও সান্ত¡না নিশ্চয়। জলের মূল্যে ইলিশ রফতানিতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও; বন্ধুত্বের অকৃত্রিম মহানুভবতায় দেশবাসীকে ইলিশবঞ্চিত করে সরকার বন্ধুরাষ্ট্রের বাহবা কুড়াচ্ছে। সেটা সরকারের জন্য অর্জন তো বটেই।

কলকাতায় অবস্থানে আমি বেশ ক’বার মাছের বাজার পরিদর্শনও করেছিলাম। বাজারে হরেক মাছের দোকান ছিল, তবে নগণ্য ছিল ইলিশ মাছের দোকান। ২০০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রামের ইলিশ মাছ দেখেছি। এর অধিক ওজনের ইলিশ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। দাম শুনে আঁৎকে উঠেছিলাম। এখন পশ্চিমবাংলার সব হাটবাজারে এক, দেড়, দুই কেজির ইলিশ মাছে সয়লাব। দামও আমাদের তুলনায় বহু কম। পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের দীর্ঘ যুগের হাপিত্যেশের অবসান হয়েছে। স্বল্পমূল্যে ইলিশ ভক্ষণের এমন সুযোগ তারা হাতের নাগালে পেয়েছে। আমাদের তিস্তার পানি না দিক। তিস্তা চুক্তি রাজ্য সরকার না করুক।

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু সে মাছ নগণ্য মানুষই কিনে খাওয়ার যোগ্যতা রাখে। নিজ দেশবাসীকে বঞ্চিত করে ইলিশ রফতানি মেনে নেওয়া যায় না। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিতে কারো আপত্তি হতো না। ভারত কি নিজেদের চাহিদা অপূর্ণ রেখে অতীতে বাংলাদেশে চাল রফতানি করেছিল? করেনি। কোনো দেশপ্রেমিক সরকার এটা করতে পারে না। সে কারণে ঢাকাস্থ তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত (যিনি পূর্ববঙ্গের আদিবাসী ছিলেন) দ্বিধাহীন মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাদের জনগণকে না খাইয়ে, বঞ্চিত করে আমরা বাংলাদেশকে চাল দিতে পারব না।’ তার সেই কথায় দেশবাসী তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু তার কথা ন্যায্য ছিল। পরে ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করে খাদ্য সংকট এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। ইলিশ মাছের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার যদি একই অবস্থান নিতে সক্ষম হতো!

লেখক : ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, নতুন দিগন্ত

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist